schema:text
| - বিভিন্ন সময়ে নানান কারণে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় উঠে এসেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সুবর্ণ আইজ্যাক বারী ও তার পিতা রাশেদুল বারী৷ সম্প্রতি সুবর্ণ আলোচনায় এসেছে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট’ দাবি করে। সুবর্ণ আইজ্যাক বারীর ফেসবুক পেজ Bari Science Lab, কিছু দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে উক্ত দাবি প্রচারিত হতে লক্ষ্য করেছে রিউমর স্ক্যানার টিম। রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে সুবর্ণ আইজ্যাক বারী আসলেই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট বা দ্বাদশ শ্রেণি পাস কি না। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাকে হাইস্কুল হিসেবে গণ্য করা হয়।
সুবর্ণ বারীর ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন Bari Science Lab (আর্কাইভ)।
বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন: আরটিভি, মাছরাঙা নিউজ (ইউটিউব), দৈনিক শিক্ষা, আমাদের বার্তা।
উক্ত দাবিতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন: আনন্দবাজার পত্রিকা।
বাংলাদেশ ও ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন: এখানে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, সুবর্ণ আইজ্যাক বারী যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট নয় বরং তার চেয়েও কম বয়সে একাধিক মার্কিন শিক্ষার্থী হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন। তবে, সুবর্ণ তার স্কুল মালভার্ন হাই স্কুলের সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবি প্রচারকারীদের প্রচারিত দাবি পর্যবেক্ষণ করলে কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ উল্লেখ করতে দেখা যায়নি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে সুবর্ণকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, সুবর্ণকে লং আইল্যান্ডের তার স্কুলের সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে৷ মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবিসি নিউজের ওয়েবসাইটেও একই তথ্য উল্লেখ করা হয়। মালভার্ন ইউনিয়ন ফ্রি স্কুল ডিস্ট্রিক্টের বরাতে জানানো হয়, নাসাউ কাউন্টি স্কুলের ইতিহাসে সে সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট। উল্লেখ্য যে, নাসাউ একটি কাউন্টির নাম যেখানে তার স্কুল অবস্থিত। পুরো যুক্তরাষ্ট্রে এরকম তিন হাজারেরও অধিক কাউন্টি আছে। সুবর্ণ তার কাউন্টির সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট বলেই এবিসি নিউজ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সুবর্ণের ফেসবুক পেজে সুবর্ণকে নিয়ে মার্কিন ট্যাবলয়েড সংবাদপত্র নিউ ইয়র্ক পোস্টে সংবাদ প্রকাশের বিষয়েও জানানো হয়। নিউ ইয়র্ক পোস্টে তাকে নিয়ে প্রকাশ করা প্রতিবেদনেও সুবর্ণকে তার লং আইল্যান্ডের হাইস্কুলের সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট বলা হয়, পুরো যুক্তরাষ্ট্রের বলা হয়নি।
তাছাড়া, মার্কিন সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট দাবি করে সুবর্ণের ফেসবুক পেজে করা পোস্টের সাথে ক্যাপশনে Fox 5 New York নামের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ইউটিউব ভিডিও লিঙ্ক দেওয়া হয়, যেখানে সুবর্ণকে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়। এমনকি উক্ত ভিডিওতেও তাকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট বলা হয়নি বরং তার স্কুলের সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট বলা হয়।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে সুবর্ণের হাইস্কুল মালভার্ন হাই স্কুলের সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছে, সুবর্ণ ১২ বছর বয়সে হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হয়েছে এবং সে তাদের স্কুলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট।
পরবর্তীতে, সুবর্ণের চেয়ে কম বয়সে (১২ বছরের চেয়ে কম) আর কোনো আমেরিকান গ্র্যাজুয়েট হয়েছেন কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধানে সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েটদের সম্পর্কে বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
১৯৯৪ সালের ৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গাডসডেন টাইমস নামের একটি সংবাদপত্রে একটি সংবাদ পাওয়া যায়। সংবাদটি পড়ে জানা যায়, মাইকেল কার্নি নামের একজন ছাত্র মাত্র ৬ বছর বয়সে হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হন এবং ১০ বছর বয়সেই দ্য ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ আলাবামা থেকে কলেজ পর্যায়ও সম্পন্ন করেন৷ তিনি ৬ বছর ৫ মাস বয়সে হাইস্কুল সম্পন্ন করেন, ৬ বছর ৭ মাস বয়সে জুনিয়র কলেজে প্রবেশ করেন এবং ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ আলাবামা থেকে ১০ বছর বয়সে কলেজ সম্পন্ন করেন। এই তিনটি গিনেস রেকর্ডই তার দখলে বলেই উক্ত সংবাদে উল্লেখ করা হয়। লরেন্স জার্নাল ওয়ার্ল্ড নামের যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংবাদপত্রে ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাইকেল ৫ বছর বয়সে হাইস্কুলে পদার্পন করে এবং তার এক বছর পরই তার হাইস্কুল পর্যায় সম্পন্ন হয়ে যায়। টাইমস ডেইলি নামের অন্য আরেকটি সংবাদপত্র থেকে জানা যায়, ৫ বছর বয়সেই মাইকেল কার্নি হাইস্কুলের জন্য প্রস্তুত ছিলেন কিন্তু তাকে কোনো বিদ্যালয় এত কম বয়সে ভর্তি করতে রাজী ছিল না৷ অগত্যা, তিনি তার মায়ের কাছে পড়াশোনা করেন এবং ৬ বছর বয়সে তিনি তার ডিপ্লোমা অর্জন করেন। অতঃপর, তিনি তার জুনিয়র কলেজ ক্যারিয়ার শুরু করেন। দ্য তুসকালুসা নিউজ নামে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি সংবাদমাধ্যমে ১৯৯৮ সালে তাকে নিয়ে আরেকটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ততদিনে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন। উক্ত প্রতিবেদন থেকেও জানা যায়, ৫ বছর বয়সে স্যান ম্যারিন হাইস্কুলে তাকে ভর্তি করা হয় এবং এক বছর পর ৬ বছর বয়সে তিনি হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হোন। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিনি ১০ বছর বয়সেই কলেজ সম্পন্ন করেন। তার বাবা একজন সাবেক মার্কিন নেভি অফিসার এবং তার মা জাপানিজ-আমেরিকান। জিনিয়াসেস নামের একটি প্ল্যাটফর্মে মাইকেলের সম্পর্কে বেশ বিস্তৃত তথ্য পাওয়া যায় যেখানে দেখা যায় তার জন্ম আমেরিকায় এবং সে একজন আমেরিকান।
তাছাড়া, ব্রিটিশ শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় ৯ বছর বয়সে ডেভিড বালোগান নামে একজন ছাত্র হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হয়েছে। অর্থাৎ, এই ছাত্রটিও সুবর্ণের চেয়ে কম বয়সেই হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হয়েছে। গার্ডিয়ানের উক্ত রিপোর্টে সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হিসেবে ৬ বছর বয়সে হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হওয়া মাইকেল কার্নির নাম উল্লেখ করা হয় এবং বলা হয়, মাইকেল কার্নিই তখনও (প্রতিবেদন প্রকাশকালীন) এই ক্ষেত্রে গিনেস রেকর্ডধারী৷ তবে, গিনেস রেকর্ডের ওয়েবসাইটে মাইকেল কার্নির নামে রেকর্ডের পেজটি পাওয়া যায়নি। পূর্ববর্তী সময়ে থাকলেও হয়তো পরবর্তী সময়ে সেটি মুছে ফেলা হয়েছে প্রতীয়মান হচ্ছে। এই বিষয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ডেভিডকে নিয়ে ফক্স ৪ কেসি নামক সংবাদমাধ্যমেও একই তথ্য উল্লেখ করতে দেখা যায়। আফ্রিকান আমেরিকানদের নানা তথ্য কিংবা সংবাদ প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাক নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে থেকেও একই তথ্য জানা যায়। উক্ত একই প্রতিবেদনে তাকে আফ্রিকান-আমেরিকান বলেও দাবি করা হয়।
এছাড়া, তানিশক আব্রাহাম নামে আরেকজন শিক্ষার্থীর সম্পর্কে জানা যায়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, সে মাত্র ১০ বছর বয়সেই হাইস্কুলের পড়াশোনা সম্পন্ন করে ১১ বছর বয়সের মধ্যেই তিনটি এসোসিয়েট ডিগ্রি অর্জন করেছিল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে তার সম্পর্কে জানা যায়, তাকে ৭ বছর বয়স থেকেই গৃহশিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। একই তথ্য জানা যায়, বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকেও। তাকে নিয়ে ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যম এনডিটিভিতেও একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, সে একজন ভারতীয়-আমেরিকান।
সুতরাং, সুবর্ণ বারীর নিজের পঠিত লং আইল্যান্ডের মালভার্ন হাই স্কুলের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হওয়ার বিষয়কে তার আমেরিকার সর্বকনিষ্ঠ হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট হওয়ার দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Fox 5 New York – 12-year-old set to graduate from Long Island high school
- Gadsden Times – Gadsden Times 7 Jun 1994
- Lawrence Journal-World – Lawrence Journal-World 9 Aug 1998
- Times Daily – Times Daily 27 Jan 1993
- Statement of Malverne High School
- Rumor Scanner’s own analysis
|