schema:text
| - ২৫ নভেম্বর (সোমবার) ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ভয়াবহ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ২৪ নভেম্বর (রবিবার) সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং কবি নজরুল কলেজে মোল্লা কলেজ শিক্ষার্থীদের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের জেরে এ ঘটনা ঘটে। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এ হামলা চালায়৷ এ ঘটনায় কলেজ ভবনের অফিস কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরি, অধ্যক্ষের কক্ষ এবং প্রশাসনিক কক্ষসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস হয়। মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই সংঘর্ষে সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজে সাতজন নিহতের দাবি করা হয়। মোল্লা কলেজও তাদের তিন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার কথা জানায়। দুই কলেজের দাবির পর মোট ১০ জনের মৃত্যুর দাবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সংঘর্ষে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমে তিন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার দাবি করলেও পরে তা প্রত্যাহার করে। একইভাবে, সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজে সাতজন নিহত হওয়ার দাবি প্রথমে সরাসরি উল্লেখ করা হলেও পরে তা শিক্ষার্থীদের মতামত হিসেবে সংশোধন করা হয়। বাস্তবে, এ সংঘর্ষে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোহরাওয়ার্দী কলেজের নিহতের দাবি
২৫ নভেম্বর সংঘর্ষের সময় দুপুর ২টা ২৯ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ৭ জন নিহত এবং প্রায় শতাধিক আহত হয়েছেন।
তবে, এই পোস্টটি এক ঘণ্টার মধ্যেই সংশোধন করা হয়। বেলা ৩টা ৪২ মিনিটে পোস্টে “দাবি শিক্ষার্থীদের” শব্দগুচ্ছ যুক্ত করা হয়। এরপর একাধিকবার পোস্টটি এডিট করা হয়। সন্ধ্যা ৬টা ৪৯ মিনিটে পোস্টের সর্বশেষ সংস্করণে লেখা হয়, “এখন পর্যন্ত নিহত ৭ জন এবং আহত প্রায় শতাধিক – দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীদের।”
অর্থাৎ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ সাংবাদিক সমিতির পেজ থেকে প্রথমে সরাসরি মৃত্যুর দাবি করা হলেও, পরে তা শিক্ষার্থীদের বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
মোল্লা কলেজের নিহতের দাবি
ঘটনার দিন দুপুরে মোল্লা কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংঘর্ষে মোল্লা কলেজের তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আশরাফ সামীর বিবিসি বাংলার কাছেও তিনজন নিহতের দাবি করেন। তবে, বিকেলের মধ্যেই কলেজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ভিন্ন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যেখানে কোনো নিহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
এই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। এ বিষয়ে মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন গণমাধ্যমকে জানান, “আমাদের আগের বিজ্ঞপ্তিতে সঠিক তথ্য ছিল না। অফিসিয়াল পেজ থেকে প্রকাশিত নতুন বিজ্ঞপ্তিই সঠিক। এখন পর্যন্ত ৩ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার কোনো তথ্য আমরা পাইনি। সেজন্য আগের বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করেছি।”
অর্থাৎ, মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথমে তিনজন নিহতের দাবি করলেও পরে তা ভুল বলে স্বীকার করে ওই দাবি থেকে সরে আসে।
নিহত দাবিতে আহত ব্যক্তির ছবি প্রচার
সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়ে। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ছবিগুলোর উৎস দৈনিক প্রথম আলো-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ছবিগুলো সংঘর্ষে আহত অবস্থায় পড়ে থাকা ব্যক্তিদের, যা তুলেছেন আলোকচিত্রী দীপু মালাকার।
রিউমর স্ক্যানার টিম দীপু মালাকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি নিহতের বিষয়ে নিশ্চিত নন। তবে, সামাজিক মাধ্যমে নিহত দাবি করা একজন ব্যক্তির জীবিত থাকার পোস্ট তিনি দেখেছেন।
পরবর্তী অনুসন্ধানে, ‘গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা হেল্পলাইন’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে একই ছবি যুক্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। মন্তব্যে সহপাঠীরা জানান, ছবির ব্যক্তি কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী হাসিনুর। মন্তব্যের ঘরে তার মেডিকেলে চিকিৎসাধীন থাকার ছবিও দেখা যায়।
এছাড়া, ‘Masum Ahamd’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারিত পোস্টে হাসিনুরকে জীবিত উল্লেখ করে দাবি করা হয়, তিনি কবি নজরুল কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্র। মাসুমের পোস্ট থেকে হাসিনুরের ফেসবুক আইডিও শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
অর্থাৎ, সংঘর্ষে আহতদের ছবি নিহত দাবি করে প্রচার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৫ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে কেউ মারা যায়নি। তবে এতে ২৫ জন আহত হয়েছেন।
দৈনিক যুগান্তর-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সংঘর্ষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগের মাথা ও শরীরে আঘাত রয়েছে। মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী নাফি (১৮) গুলিবিদ্ধ হন, এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী কলেজের ৬ জন, নজরুল কলেজের ১৬ জন, সলিমুল্লাহ কলেজের ৬ জন এবং ইম্পেরিয়াল কলেজের ১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. মাহমুদ জানান, বিকেল পর্যন্ত ৩০ জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে আসেন, যাঁদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর। কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
সুতরাং, মোল্লা কলেজে হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় মৃত্যুর দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s investigation.
- DMRC: Facebook Post
- The Daily Campus: ৩ শিক্ষার্থী নিহতের দাবি থেকে সরে এসেছে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ
- Prothom Alo: যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষ থেমেছে, আহত অনেকে, কলেজজুড়ে ভাঙচুরের চিহ্ন
- Masum Ahamd: Facebook Post
- GST Admission Test Helpline: Facebook Post
- Talukder M. Hasinur: Facebook AccountDMP: Facebook Post
- Jugantor: ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা দিয়ে পালটা হামলা, রণক্ষেত্র মোল্লা কলেজ
|