schema:text
| - সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি শ্রেণিকক্ষে লাঠি হাতে এক যুবকের একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় প্রচার করা হয়েছে এবং দাবি করা হচ্ছে, আল জাজিরা জানিয়েছে যে, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত যুবক নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য যিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি নিয়ে আল জাজিরা কোনো সংবাদই প্রচার করেনি৷ বরং কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি অডিও বার্তা এবং আল-জাজিরার লোগো ব্যবহার করে আলোচিত ভিডিওটি উক্ত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া, জুবায়ের এলাহী নামে এই যুবক একজন মানসিক রোগী বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে অন্তত গত ০১ নভেম্বর থেকে ভিডিওটি ফেসবুকে পাওয়া যায়। তবে এ সংক্রান্ত দাবির কোনো পোস্টেই আল জাজিরার কোনো প্লাটফর্মের ভিডিও লিংক ক্যাপশন বা কমেন্টে দেওয়া হয়নি। কথিত এই ভিডিও প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে শুরুতে বলা হয়, “In Bangladesh, Hizb ut Tahrir militants have been terrorizing students of Salimullah Medical college in Dhaka. On August 5, Dr. Yunus came to power in the hands of militants. After that he freed all the militants in the jail from the country. Bangladesh is going to a very turbulent time.” অথচ, ০৫ আগস্ট নয়, ড. ইউনূস শপথ নেন ০৮ আগস্ট। তাছাড়া জঙ্গিদের হাত ধরে নয়, ড. ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে। বাংলাদেশের ০৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে আল- জাজিরার বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে কোথাও Militant বা জঙ্গিদের হাত ধরে ড. ইউনূস ক্ষমতায় এসেছে এমন কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। তাই সঙ্গত কারণেই প্রতিয়মান হয় আল জাজিরা এই অভ্যুত্থান নিয়ে এরূপ শব্দ ব্যবহার করে না।
পরবর্তী অনুসন্ধানে আল জাজিরার ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেল পর্যবেক্ষণ করে এই দাবিতে কোনো সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের বিষয়ে আল জাজিরায় সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর একটি মতামত প্রচার করা হয় যেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্ব এবং অন্যান্য দেশে হওয়া বিপ্লব পরবর্তী সময়ের উল্লেখ করে নানা মতামত দেওয়া হয়। উক্ত প্রতিবেদনে প্রচারিত দাবিটির উল্লেখ পাওয়া যায়নি। একইদিনে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ এবং তার আগে ২৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিষয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়। তবে, কোনোটিতেই প্রচারিত দাবিটির উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, আলোচিত ভিডিওটির লোগো এবং ভয়েস পর্যবেক্ষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, এই দু’টিই আলাদাভাবে যুক্ত করা হয়েছে। কারণ, লোগোর রেজ্যুলেশনের সাথে ভিডিওর রেজ্যুলেশনের বৈসাদৃশ্য রয়েছে। কথিত এই প্রতিবেদনে ব্যবহ্রত অডিওর ভয়েসটির সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি ভয়েসের মিল পাওয়া যায়; যা সাধারণত আল জাজিরার প্রতিবেদনে দেখতে পাওয়া যায় না।
আল জাজিরার ঢাকা অফিস রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছে, তারা এমন কোনো সংবাদ বা ভিডিও তৈরি করেননি।
Read More: আল জাজিরার বরাতে প্রতিবছর ৬ মিলিয়ন মানুষ ইসলাম ত্যাগ করার বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার
আল জাজিরা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি তা নিশ্চিত হওয়ার পর ভিডিওটির মূল প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার৷ গত ২৭ অক্টোবর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিম অর্চি মূল ভিডিওটি প্রথম পোস্ট করেন।
ভিডিওটির সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, সেদিন তাদের ক্লাস চলাকালে লাঠি হাতে উক্ত ব্যক্তি শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন। অর্চির দাবি, তিনি একজন মানসিক রোগী।
এ বিষয়ে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জুবায়ের এলাহী নামের এই ব্যক্তিকে ২৯ অক্টোবর কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রতিবেদনটিতে জুবায়েরের মা সুফিয়া আক্তারের বরাতে জানানো হয়, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ একদিন তার ছেলে ঘুম থেকে এক মেয়ের নাম বলে চিৎকার করে ওঠে। এর পর থেকেই সমস্যা। তবে ওই মেয়েকে তারা কখনো দেখেননি। প্রায় ১০ বছর ধরে ছেলেকে নিয়ে ভুগছে পরিবার। জুবায়ের যখন পাগলামি করেন, তখন তাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। রাজধানীর এক মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলেকে ঘর ছেড়ে দিয়েছিলেন। ওই চিকিৎসক বলেছিলেন, ছেড়ে দিয়ে রাখলে জুবায়ের একদিন সুস্থ হয়ে যাবেন। ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেলের ঘটনার আগের দিন দুপুরের খাবার খেয়ে জুবায়ের বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। রাতে আর ফেরেননি। পরদিন তার বড় ছেলে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখান। ওই দিন রাতে ছেলে বাড়িতে ফিরে এলে ওই ঘটনা জিজ্ঞাসা করলে জানান, তিনি ওই মেয়েকে খুঁজতে গিয়েছিলেন। যুবকের মায়ের দাবি, ‘আমার ছেলে পাগলামি করলেও কারও কোনো ক্ষতি করে না। গত(কাল) সোমবার বিকেলে পুলিশ ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় সে যে মানসিক রোগী, তার সব চিকিৎসাপত্র দেখিয়েছি।’
সুতরাং, রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা অবস্থায় নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের সদস্যকে দেখা যাচ্ছে শীর্ষক দাবিতে আল জাজিরার সংবাদ প্রচার করার দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Al Jazeera – Bangladesh
- Prothom Alo – সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়া তরুণ ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’, আটকে রাখা হতো ঘরে
- Rumor Scanner’s own analysis
|