schema:text
| - সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ গত ১২ বছরে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তিন কর্মকর্তা ও সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জন। এরপরই আবেদ আলী পিএসসির কোন চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয় আলোচনা। এর প্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে দাবি করেন তিনি সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকের গাড়িচালক ছিলেন। তবে গণমাধ্যমের সাথে সাক্ষাৎকারে এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে সাদিক জানান, তার সময়ে নয় বরং ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম ও এটিএম আহমেদুল হক চৌধুরী পিএসসি চেয়ারম্যান থাকাকালীন আবেদ পিএসসির চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক ছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে যে, ২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন সঙ্গীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান রহমান খান। তখন তার মা ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন। দুর্নীতির জন্য আবারও বিসিএসের ভাইভা অনুষ্ঠিত হলে ভাইভা থেকে বাদ পড়েন তাহসান। পরবর্তীতে একই দাবিতে কতিপয় গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ দেখুন : যুগান্তর, বাংলাদেশ জার্নাল, ডেইলি বাংলাদেশ (ফেসবুক), জুম বাংলা, বাংলা ইনসাইডার।
উল্লেখ্য, অনলাইন ভিত্তিক গণমাধ্যম ডেইলি বাংলাদেশ তাদের ফেসবুক পেজে প্রচারিত ফটোকার্ড ও একই বিষয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে একই সিদ্ধান্তমূলক তথ্য প্রচার করলেও প্রতিবেদনের বিস্তারিত অংশের এক পর্যায়ে তারা জানায়, “তাহসান খানের ২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়ার বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে পারেনি ডেইলি বাংলাদেশ; বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মারফতে জানা গেছে।”
এছাড়া অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রকাশ’ একই দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে তা সরিয়ে নেয়।
উক্ত দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উল্লেখ্য, বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে তথ্যসূত্র হিসেবে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভি ও সমকালের নাম উল্লেখ করা হলেও আরটিভি বা সমকালে আলোচ্য দাবিতে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ইউটিউবে তাহসানের একটি ডিপফেক ভিডিওরও সন্ধান মিলেছে যাতে একই দাবি প্রচার করতে দেখা গেছে। দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাতিলকৃত ২৪ তম বিসিএসে সংগীতশিল্পী তাহসান রহমান খানের পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়া এবং একই বিসিএসের পুনরায় অনুষ্ঠিত হওয়া বিসিএসে ভাইবা বা মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়ার তথ্যগুলো সঠিক নয়। বরং, তাহসানের পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হওয়ার দাবিকৃত ২৪তম বিসিএস পরীক্ষাটি প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরই বাতিল করা হয়৷ পরবর্তীতে পুনরায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং প্রথমবারের মতো ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয় যাতে আলোচিত ক্যাডারে প্রথম হন কাজী এহসানুল হক।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মূলধারার গণমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবে তৎকালীন সময় ২০০৩ সালের ৩ মার্চ তারিখে “২৪তম বিসিএস পরীক্ষা বাতিল” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ পাওয়া যায়৷ সংবাদটি পড়ে জানা যায়, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ২০০৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়া ২৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ২০০৩ সালের ৩ মার্চ তারিখে বাতিল ঘোষণা করা হয়৷ তবে, পিএসসি কর্তৃপক্ষ প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ স্বীকার করেনি বরং জনমনে সন্দেহ ও বিতর্ক নিরসনকল্পে পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে বলে পিএসসির তরফ থেকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে পুরোনো পত্রিকার অনলাইন সংরক্ষণাগার সংগ্রামের নোটবুক ওয়েবসাইটের সহায়তা নেয় রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত ওয়েবসাইটে একই তারিখে প্রকাশিত দৈনিক জনকণ্ঠ এবং দ্য ডেইলি স্টারের প্রিন্ট সংস্করণের কপি খুঁজে পাওয়া যায়। এই দুইটি পত্রিকা থেকেও ২৪ তম বিসিএস (বাতিলকৃত) সম্পর্কে একই তথ্য জানা যায়।
পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ৮ আগস্ট তারিখে ২৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়।
অর্থাৎ, প্রথম দফায় হওয়া ২৪তম বিসিএস পরীক্ষাটি প্রিলিমিনারির পরই বাতিল করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি নিয়মানুযায়ী পরবর্তীতে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য, বিসিএস ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পেতে একজন পরীক্ষার্থীকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইবা প্রতিটি স্তরে উত্তীর্ণ হতে হয়। কেবলমাত্র প্রিলিমিনারি পাস করেই কোনো ব্যক্তির বিসিএস ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তাহসান প্রিলিমিনারি পাস করেছিলেন কি না সেই বিষয়ে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু, প্রথম দফায় হওয়া ২৪তম বিসিএসে কেউ ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হতে পারেনি কেননা এটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম স্তর অর্থাৎ প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পরই বাতিল হয়ে যায়। তাছাড়া, ২৪তম বিসিএসে ভাইভা পুনরায় অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়টিও সত্য নয়। বরং প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দুইবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা একবারই অনুষ্ঠিত হয় এবং সবশেষে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ওয়েবসাইটের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেকশনে থাকা ২৪তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন থেকে জানা যায়, ২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন কাজী এহসানুল হক। এছাড়া, উক্ত প্রজ্ঞাপনে ২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে আর কাউকে প্রথম স্থান অর্জনকারী হিসেবে উল্লেখ করতে দেখা যায়নি।
মূলত, সম্প্রতি ২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে সংগীতশিল্পী তাহসান প্রথম হয়েছেন শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ২৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েকদিন পরই বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা তখনও অনুষ্ঠিত হয়নি এবং ভাইভা ছাড়া বিসিএস ক্যাডার হওয়া বা মেধাতালিকায় স্থান দখল করা সম্ভব নয়। তাই, প্রশ্নফাঁসের ফলে তাহসানের পররাষ্ট্র ক্যাডার হওয়ার দাবিটি অমূলক। উল্লেখ্য, ২৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠিত হয় এবং তারপর ভাইভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নিয়মানুযায়ী নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয় এবং সেসময় পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন কাজী এহসানুল হক।
সুতরাং, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ থাকা ২৪তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার করার পর মৌখিক পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠিত হলে তাহসান বাদ পড়েন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Daily Inqilab – ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা বাতিল
- Daily Janakantha – দৈনিক জনকণ্ঠ – ০৪ মার্চ ২০০৩
- The Daily Star – দ্য ডেইলি স্টার – ০৪ মার্চ ২০০৩
- বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন – বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন
- Rumor Scanner’s own analysis
|