schema:text
| - সম্প্রতি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য শুভ আফ্রিদির একটি মন্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, তিনি মন্তব্যে ছাত্র আন্দোলনে স্নাইপার (৭.৬২) চালানোর স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন। আন্দোলনে ঢুকে গণহত্যা চালানোর পুরস্কার হিসেবে ৫ আগস্ট ও তারপর থেকে জেলের সব সন্ত্রাসী ও জঙ্গি বাহিনীকে মুক্তি প্রদান করা হয়।
ভিডিওটিতে শুভ আফ্রিদিকে বলতে শোনা যায়, “আন্দোলনে মাঠে ছিলাম। আমরা যারা সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, তারা আমরা গ্রেনেড দিয়ে খেলেছি। আমরা বুলেট ফায়ার করেছি। আমরা জানি কীভাবে শত্রুর মোকাবেলা করতে হয়। তো আওয়ামী লীগ আমাদের শত্রু ছিল, ওদের মোকাবেলা করার জন্য মাঠে ছিলাম। বুঝা যাচ্ছে আমার ছেলে ওই স্নাইপার রাইফেল হাতে নিয়ে ছবি তুলেছে আর ওর এক হাতে আমার কমান্ডো নাইফ ছিলো। জেন, জেড জেনারেশন এতো সচেতন ওই জিনিসটা কিন্তু তারা খাবে না”।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওতে জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে স্নাইপার (৭.৬২) চালানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য শুভ আফ্রিদি কোনো স্বীকারোক্তি দেন নি বরং, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় তার দেওয়া একটি বক্তব্যের ভিডিও সম্পাদনার মাধ্যমে কাঁট-ছাঁট করে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে Bdn71 নামক ইউটিউব চ্যানেলে গত ৪ নভেম্বর “আসলেই কি মুগ্ধর আসল খু নি শুভ আফ্রিদি? Shuvo Afridi | Mugdho | Quota Protest” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওতে শুভ আফ্রিদির বক্তব্য দেওয়ার দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিও বক্তব্যে শুভ আফ্রিদি বলেন, “যারা আমাকে জানেন যারা আমাকে চেনে বাজার আমার পোস্টে গেছে তারা দেখেছে ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকে ওই সময়ে সময়ে যে মানুষ গুম খুন হওয়ার ভয় করত, যে হাসিনার ফ্যাসিস্টের আমলে মানুষ একটা কথা বলতে পারতো না সে আমল থেকে কিন্তু আমি হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমাকে বলা হয়েছে জঙ্গি ট্রেইনিং দেই যেটা আমি আমি ওয়ান ম্যান আর্মি রান আমাকে টিম আছে যেখানে আমি বুট ক্যাম্প করাই এবং যেখানে গত তিন বছরে আমি সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ ছেলেকে ফ্রী ট্রেনিং দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, অন্য অনেক জায়গায় ঢুকেয়েছি ভালো ভালো জায়গায় আছে বা যাদের ভেতর দেশপ্রেম আছে এবং সারা বাংলাদেশে আমরা ওএমেজি একটা টিম আছে ৬৪০০০ আমার ফলোয়ার্স আছে যারা লিখেছে যে আমি কি করি, সবাইকে জঙ্গি বানাইতে পারি যাদের মধ্যে দেশ প্রেম আছে। হাসিনার সরকারের কাছে তারা হচ্ছে জঙ্গি, দেশদ্রোহী ঠিক আছে মুগ্ধ খুনি, এগুলো বলবে। তা আমাকে নিয়ে যেটা হচ্ছে যে আমি ৭.৬২ এর মাস্টারমাইন্ড এগুলা বলা হচ্ছে। আসলে এগুলো দ্বারা আমার মনে হচ্ছে ওরা আমাকে প্রমোশন করছে, মানে যারা আমাকে চিনত না আগে তারা আমাকে কিন্তু চিনছে এবং যখন প্রোফাইলে আসে এবং দেখতেছে এই লোকটাকে দেখছি এ আসলে তো দেশ প্রেমিক। প্রপাগাণ্ডানর একটা লিমিট থাকে। লিমিট ক্রস করে ফেলছে। একটা পর্যায় গেলে মানুষের প্রোপাগাণ্ডা মানুষ তো কানে নেয়। বাট একটা পর্যায়ে গেলে প্রোপাগাণ্ডা কিন্তু মানুষ তখন মানে অন্য কোন একটা জিনিস মানে আওয়ামী লীগ থেকে সত্য কোন নিউজও আসে মানুষে প্রোপাগাণ্ডা মনে করবে এটা কিন্তু আসলে ওদের একটা দুর্বলতা বলবো। বা এটা বলব যে হচ্ছে বর্তমান সময়ে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অস্ত্র কিন্তু প্রোপাগাণ্ডা। ওদের কোন অস্ত্র নাই। ওরা বাইরে বসে বসে বাইরের দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে টাকা পয়সা খরচ করতেছে প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানোর জন্য। একদিন দেখবেন ডক্টর ইউনূস এর নামে বলতেছে, একদিন সেনাপ্রধানের নামে বলতেছে, ছাত্র সমন্বয়কের নামে বলতেছে। শুধু আমি না যারা দেশের পক্ষে কাজ করে তাদের নিয়ে কিন্তু লিখছে। সো আমার মতো শুভ আফ্রিদিকে নিয়ে ওরা বলতেই পারে। মানুষ জানে যে আমি কি। আমি দেশ প্রেমিক নাকি আমি দেশদ্রোহী, আমি জঙ্গি নাকি আমি মুসলিম। যদি আমার দাড়ি থাকার জন্য আমাকে জঙ্গি খেতাব দেয়, আমার নামাজ পড়ার জন্য কেউ জঙ্গি খেতাব দেয় তাহলে আমি জঙ্গি। আমার বলার কিছুই নাই। একজন মুসলমান নামাজ পড়বে একজন মুসলমান দাড়ি রাখবে একজন মুসলমান অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করবে না কোন অন্যায়ের সামনে মাথা নত করবে না। আর আর্মিতে আমাদের শিখানো হয় ‘এভার হাই ইস মাই হেড’ চির উন্নত মম শির। অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করতে শিখি নাই। আমারা যারা সেনাবাহিনীর অফিসার অবসর নেয়ার পরও আমরা কিন্তু দেশপ্রেম আমাদের মুখ থেকে উঠে যায় না। আমরা কিন্তু জিয়াউল আহসান না। জিয়াউল আহসান যদি হইতাম তাহলে এখন চাকুরিতে থাকতাম। আমরা যেহেতু ওই ১৫ বছর হাসিনার অন্যায় কোন অর্ডার ফলো করিনি এজন্য কিন্তু আমরা এখন চাকরি থেকে এই অবস্থায়। এই অবস্থায় থাকায় কিন্তু আমি খারাপ ফিল করছি না কারণ আমি এখনো দেশের পক্ষে কাজ করছি কাজ করে যাবো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।”
একই ইউটিউব চ্যানেলে গত ২ নভেম্বর “আসলেই কি ছাত্র আন্দোলনে স্নাইপার ব্যবহার করেছেন শুভ আফ্রিদি?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত ভিডিওর সাথেও আলোচিত দাবির ভিডিওর শুভ আফ্রিদির বক্তব্যের দৃশ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ২ মিনিটে শুভ আফ্রিদি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে এই আওয়ামী লীগ যার ভেতরে একটু দেশ প্রেম পেয়েছে তাদেরকে কিন্তু চাকুরি থেকে বের করে দিয়েছে কোন কারণ ছাড়া। সো এই দেশ প্রেমিক অফিসার কিন্তু ওই আন্দযলনের ঘরে বসে থাকবে না মাস্টারমাইন্ড কিনা আমরা এই আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম আন্দোলনে মাঠে ছিলাম। আমরা সেনা কর্মকর্তা তারা আল্লাহ ছাড়া কাওকে ভয় করিনা। কারণ আমরা যখন ট্রেইনিং করেছি, আমরা গ্রেনেড দিয়ে খেলেছি, আমরা বুলেট ফায়ার করেছি। আমরা জানি কীভাবে শত্রুকে মোকাবেলা করতে হয়। তো আওয়ামী লীগ আমাদের শত্রু ছিল ওদের মোকেবিলা করার জন্য মাঠে ছিলাম। টু পয়েন্ট সিক্স অনেকেই জানেনা এটা কি? এটা হচ্ছে একটা কেলিভার বা বোট। আর ওরা বলে এটা স্নাইপার। আর আমি স্নাইপার দিয়ে মুগ্ধকে খুন করেছি। তো ওরা কেন এটা করেছে, ওরা যে পোস্টটা করেছে পোস্টটা দেখবেন আমি আমার ছেলেকে একটা খেলনা স্নাইপার রাইফেল কিনে দিয়েছি। ওটা নিয়ে আমি ছবি তুলেছিলাম। দেখে বুঝাই যাচ্ছে আমার ছেলে ওই স্নাইপার রাইফেল হাতে নিয়ে ছবি তুলেছে আরেক হাতে আমার কমান্ডো নাইফ ছিল। তো এটাকে ওরা ভেবেছে এটা স্নাইপার। মানে ওরা নিজেও জানেনা এটা খেলনা বন্দুক। তো এভাবে প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে আমাদের মতো দেশপ্রেমিক অফিসার আছে এদের মোরাল ডাউন করে দিচ্ছে। বাট আসলে ওইগুলো দেখে আমাদের মোরাল ডাউন হচ্ছে না। মাদের মোরাল আরও আপ হয়। কারণ আমরা জানি যারা দেশ প্রেমিক তাদেরকে আওয়ামী লীগের এই বিএএল পার্টি কোন একটা তকমা লাগিয়ে মানুষের কাছে নেগেটিভ ওয়েতে প্রেজন্ট ক্ক্রতে চাইবে। কিন্তু বর্তমান মানুষ এতোটা সচেতন, জেন-জেড জেনারেশন এতটা সচেতন এই জিনিসটা তারা খাবেনা।”
উক্ত দুই ভিডিওর কোনোটাতেও তিনি জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে স্নাইপার (৭.৬২) চালানোর বিষয়ে কথা বলেননি বরং, তিনি তার সন্তানের খেলনা স্নাইপারের ছবি দিয়ে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে জানান।
এছাড়া একই ভিডিও শুভ আফ্রিদি তার ফেসবুক পেজে গত ১১ নভেম্বর এবং ৬ নভেম্বর একটি আলাদা (১, ২) পোস্ট করে ভিডিওটি গুজব বলে চিহ্নিত করেন।
সুতরাং, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য শুভ আফ্রিদি জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলনে স্নাইপার চালানোর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পাদিত বা বিকৃত।
তথ্যসূত্র
- Bdn71 – আসলেই কি মুগ্ধর আসল খু নি শুভ আফ্রিদি?
- Bdn71 – আসলেই কি ছাত্র আন্দোলনে স্নাইপার ব্যবহার করেছেন শুভ আফ্রিদি?
- Shuvo Afridi The One Man Army – Facebook Post
- Shuvo Afridi The One Man Army – Facebook Post
|