schema:text
| - সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কার করে কোটা ব্যবস্থার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীরা গত পহেলা জুলাই থেকে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে গত ১৪ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হন। এর প্রেক্ষিতে বিক্ষোভের মাত্রা বাড়ে, ঘটে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা, এসেছে বহু হতাহতের খবরও। গত ১৫ জুলাই ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় যত ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে তার মধ্যে এই ছবিটি একটি৷ এই ছবি নিয়ে একাধিক দাবি প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কিছু পোস্টে তার পরিচয় দাবি করা হচ্ছিল, তিনি ছাত্রী সংস্থার তানিয়া আক্তার মীম। তিনি নিহত হয়েছেন।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবি টিকটকে দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
অন্যদিকে কিছু পোস্টের দাবি এমন ছিল, তার বড় ভাই রাকিব ইসলাম, যিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. কেরামত আলী হলের ছাত্রলীগ নেতা। তিনি এই নারীকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন।
উক্ত দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া এই নারী নিহত হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়, বরং সানজিদা আহমেদ তন্নি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী সহিংসতায় আহত হলেও বর্তমানে সুস্থ আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাছাড়া, রাকিব নামে তার কোনো ভাই নেই৷
এ বিষয়ে দুইটি দাবি সামনে রেখেই অনুসন্ধান শুরু করে রিউমর স্ক্যানার। অনুসন্ধানে দাবিগুলো ছড়িয়ে পড়ার সময়ে তানিয়া আক্তার মীম নামে কোনো নারীর মৃত্যুর খবর গণমাধ্যম বা বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া যায়নি। একই নামে কাছাকাছি সময়ে আরেক নারীরও মৃত্যুর ভুয়া তথ্য প্রচার করা হয়েছে, যা রিউমর স্ক্যানার ইতোমধ্যেই ফ্যাক্টচেক করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকে একাধিক ব্যক্তি (১, ২) সানজিদ এ. তন্নি নামে একটি অ্যাকাউন্টকে ট্যাগ করে আলোচিত ছবিটি পোস্ট করে উক্ত নারীর সুস্থতা কামনা করেছেন। উক্ত অ্যাকাউন্টের ছবির সাথেও বেশ মিল পাওয়া যায় আলোচিত ছবির নারীর।
পরবর্তী অনুসন্ধানে মেহেরুন নেসা তন্নি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১৬ জুলাই দুইটি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়, আলোচিত দাবিতে যে মেয়েটির ছবি প্রচার করা হচ্ছে, তার মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “একটা ছবিকে যে যার মত করে ব্যবহার করতেছে, যা তা বলে। একটা জীবিত মানুষকে মেরে ফেলতেছে। প্রতিটা ঝামেলার সময় বিভিন্ন ধরণের গুজব ছড়ায় মানুষ অ্যাটেনশন সিক করে। অপরিচিত রা নিজেদের ফ্রেন্ড,ভাই বোন, কলেজের এই অমুক তমুক কত কিছু বলে! অদ্ভুত! বিঃদ্রঃ ছবির ব্যক্তিটি জীবিত আছেন।”
আরেক পোস্টে রাকিব ইসলাম নামে উক্ত নারীর কথিত ভাই প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, “নিউজটি সম্পুর্ণ বানোয়াট! দয়া করে এই ভুয়া নিউজ ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। মেয়েটির এই নামে কোনো আপন বড় ভাই নেই এবং তার কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাও নেই।”
রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে মেহেরুন নেসা তন্নির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমাদের জানান, মেয়েটির নাম সানজিদা আহমেদ তন্নি। তারা ঢাবিতে একই বিভাগে অধ্যয়নরত। কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় তন্নি আহত হলেও এখন সে সুস্থ রয়েছে।
তন্নির বরাত দিয়ে এই সহপাঠী আমাদের জানিয়েছেন, তন্নির রাকিব নামে কোনো ভাই নেই৷ যার পোস্টকে কেন্দ্র করে এই বিভ্রান্তি তিনি তন্নির এলাকার পরিচিত ভাই। তন্নির হাসান নামে এক ভাই আছেন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন।
মূলত, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতায় এক নারীর ছবি প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, তার নাম তানিয়া আক্তার মীম। তিনি সহিংসতায় হয়েছেন। এছাড়া, কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, তার বড় ভাইয়ের নাম রাকিব ইসলাম, যিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. কেরামত আলী হলের ছাত্রলীগ নেতা। তিনি এই নারীকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তবে রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, দাবিগুলো সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত নারীর নাম সানজিদা আহমেদ তন্নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী আহত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ আছেন। এছাড়া, তন্নির রাকিব নামে কোনো ভাই নেই৷ তার হাসান নামে এক ভাই আছেন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষের ঘটনায় গণমাধ্যম সূত্রে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২০৪ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
সুতরাং, তানিয়া আক্তার মীম দাবিতে এক নারীর ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করে তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন শীর্ষক দাবি প্রচার করা হচ্ছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Statement from Maharun Nesa Tonni
- Rumor Scanner’s Own Analysis
|