schema:text
| - সম্প্রতি, ‘শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত নেতার বিরুদ্ধে ভিসানীতি কার্যকর করা হবে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মন্তব্য দাবিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসানীতি কার্যকরের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি এবং এনটিভিও উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে এনটিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিমে। সেখানে এই সংবাদটি প্রচারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে থাকা এনটিভি’র লোগোর সূত্র ধরে এনটিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে ২৯ সেপ্টেম্বর বা তার আগে পরে উক্ত শিরোনাম বা তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও এনটিভি’র ওয়েবসাইট কিংবা অন্যকোনো গণমাধ্যমেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে ২৯ সেপ্টেম্বর আরটিভি’র ফেসবুক পেজে প্রচারিত দুইটি ফটোকার্ডের ডিজাইনের সাথে আলোচিত ফটোকার্ডের ডিজাইনে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ফটোকার্ডগুলো দেখুন এখানে এবং এখানে। এ থেকে ধারণা করা যায়, এই দুইটি ফটোকার্ডের মধ্যে যেকোনো একটিকে এডিট করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া, আলোচিত ফটোকার্ডটির সাথে এনটিভি’র ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচারিত অন্যান্য ফটোকার্ডের টেক্সট ফন্টের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট অন্যকোনো সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসানীতি কার্যকরের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ২৪ সেপ্টেম্বর “যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গণতন্ত্র ও নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর আনুষ্ঠানিক ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা হয় না- এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেন, ভিসানীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেওয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হয় না। কারণ কাউকে ভিসা না দেওয়াসহ যে কোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য।
তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতিতে নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না।
পাশাপাশি, উপরোক্ত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মার্কিন ভিসানীতি কার্যকরের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি এবং এনটিভিও উক্ত তথ্য সম্বলিত কোনো ফটোকার্ড বা সংবাদ প্রকাশ করেনি।
মূলত, গত ২২ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা রয়েছেন। এর পরবর্তীতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত নেতার বিরুদ্ধে ভিসানীতি কার্যকর করা হবে’ শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মন্তব্য দাবিতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’র ফটোকার্ডের ডিজাইন সম্বলিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়। তবে, অনুসন্ধানে দেখা যায়, এনটিভি এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি বরং আলোচিত এই ফটোকার্ডটি ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় এডিট করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র বরাতে জানা যায়, ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য হওয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এনটিভি’র ফটোকার্ড নকল করে বিএনপি নেতাদের বিএনপি নেতাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার তথ্য প্রচার করা হলে তা শনাক্ত করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
গত আট মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম এবং নকল ফটোকার্ড ব্যবহার করে অপপ্রচারের বিষয়ে বিস্তারিত ফ্যাক্ট ফাইল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’কে উদ্ধৃত করে ‘শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত নেতার বিরুদ্ধে ভিসানীতি কার্যকর করা হবে’ শীর্ষক শিরোনামে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের মন্তব্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্যটি মিথ্যা এবং উক্ত ফটোকার্ডটিও এডিটেড বা বিকৃত।
তথ্যসূত্র
- NTV: Facebook Page
- NTV: Website
- Jugantor: যে কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্তদের নাম প্রকাশ করে না যুক্তরাষ্ট্র
- U.S. Department Of State: Press Release
- Rumor Scanner’s Own Analysis
|