schema:text
| - সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “রাসেল ভাইপার সাপ ইঁদুরকে ছোঁবল মারার দৃশ্য এবং সাপ যে কত বিষাক্ত তার প্রমাণ।” ক্যাপশনে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সাপটি তীব্র বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপার।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওটি ৫৫ লক্ষেরও অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ৪২ হাজারেরও অধিক পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সাপটি তীব্র বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপার নয়, বরং Western diamondback rattlesnake নামের ভিন্ন আরেকটি বিষধর সাপ যাদেরকে মূলত উত্তর আমেরিকা মহাদেশীয় স্থানে পাওয়া যায়।
অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে অনলাইনে বিদ্যমান রাসেল’স ভাইপারের ছবি কিংবা গঠনগত বৈশিষ্ট্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটির পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। রাসেল’স ভাইপারের বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii এবং রাসেল’স ভাইপারের মাথার আকৃতি ত্রিকোণাকার এবং রাসেল’স ভাইপারের গায়ে স্পষ্ট গোলাকার অনেকটা চেইনের মতো দাগ থাকে৷ তাছাড়া, বাংলাদেশে প্রাপ্ত রাসেল’স ভাইপারে সাধারণত উজ্জ্বল আকৃতির বাদামি বর্ণের মধ্যে স্পষ্ট গোলাকার দাগ থাকে। উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো এবং অনলাইনে বিদ্যমান রাসেল’স ভাইপারের ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটির বৈসাদৃশ্য দেখা যায়।
অপরদিকে প্রচারিত সাপটির সাথে Western diamondback rattlesnake এর মিল পাওয়া যায়। উদ্ভিদ এবং প্রাণী শনাক্তকরণে সাহায্য করা প্ল্যাটফর্ম iNaturalist এর একটি নিবন্ধ অনুসারে, Western diamondback rattlesnake বা Texas diamond-back ( বৈজ্ঞানিক নাম: Crotalus atrox) হলো rattlesnake প্রজাতির বিষধর সাপ যা দক্ষিণ-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোতে পাওয়া যায়। সম্ভবত উত্তর মেক্সিকোতে বেশিরভাগ সাপের কামড়ের মৃত্যুর জন্য এই প্রজাতির সাপ দায়ী এবং যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ের জন্যেও সম্ভবত এই প্রজাতি দায়ী।
এরা বিষধর সাপ। এদের শারীরিক বৈশিষ্ট্য হলো: অমসৃণ, তীক্ষ্ণ খাঁজকাটা আঁশ, সরু গলায় চওড়া মাথা, উল্লম্ব চেরা চক্ষুতারা। মোটা শরীরের পেছনে বাদামী থেকে তামাটে হিরে আকৃতির প্যাটার্ন থাকে। পিছনের শেষ অংশে র্যাটল থাকে। (উল্লেখ্য, এটি অনেকটা ঝুমঝুমির মতো। এটি বাজিয়ে সাপ সতর্কবার্তা দেয়।) হিরে আকৃতির প্যাটার্ন সবসময় স্পষ্ট নয়, এটির পার্থক্য দেখা যেতে পারে। সাধারণত এরা ৩ থেকে ৪ ফুট (৯১ থেকে ১২২ সেমি) লম্বা হয়। লেজে কালো এবং সাদা ডোরা থাকে। পেটের নিচের অংশটি ফ্যাকাশে সাদা এবং সাধারণত কোনো চিহ্ন থাকে না।
এই প্রজাতির সাপকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা, নিউ মেক্সিকো, ওকলাহোমা এবং টেক্সাসে পাওয়া যায়। এছাড়া, উত্তর মেক্সিকোতেও বিস্তৃত পরিসরে এদেরকে দেখা যায়।
Arizona-Sonora Desert Museum এর একটি নিবন্ধ অনুসারে, এদের দেহ ভারী এবং এদের মাথা ত্রিভুজাকার। এদের মুখের প্রতিটি পাশে চোখ থেকে চোয়াল পর্যন্ত দু’টি গাঢ় তীর্যক রেখা রয়েছে। এদের পিঠে গাঢ় হিরে আকৃতির প্যাটার্ন থাকে। লেজে র্যাটলের ঠিক উপরে কালো এবং সাদা ডোরা থাকে। এদেরকে মরুভূমি, ঘাসযুক্ত সমভূমি, বন, পাথুরে ঢাল এবং উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যেতে পারে। এই প্রজাতিকে দক্ষিণ-পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্র (অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ মেক্সিকো, ওকলাহোমা এবং টেক্সাস) এবং মেক্সিকোর উত্তরের অর্ধেক জুড়ে পাওয়া যায়। এরা ইঁদুরজাতীয় প্রাণী, খরগোশ, মাটিতে বসবাসকারী পাখি, টিকটিকি এবং অন্যান্য ছোট প্রাণী খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে।
উক্ত সাপটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সাপটির মিল পাওয়া যায়।
তাছাড়া, অধিকতর নিশ্চিত হতে প্রকৃতি সংরক্ষণের মতো বিষয় নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম Deep Ecology And Snake Conservation Foundation এর সাথে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। উক্ত প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট স্পেশালিষ্ট রাশিক আজমাইন আলোচিত সাপটি রাসেল’স ভাইপার নয়, বরং Western diamondback rattlesnake বলে নিশ্চিত করেন।
মূলত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি সাপের ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, সাপটি তীব্র বিষধর রাসেল’স ভাইপার সাপ৷ কিন্তু, রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটি তীব্র বিষধর রাসেল’স ভাইপার নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি Western diamondback rattlesnake নামের ভিন্ন আরেকটি বিষধর সাপ। রাসেল’স ভাইপারকে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া গেলেও Western diamondback rattlesnake এর প্রাপ্তিস্থান মূলত উত্তর আমেরিকা মহাদেশীয় অঞ্চল।
সুতরাং, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত সাপটি তীব্র বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপার মর্মে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Forestry – Russell’s Viper
- iNaturalist – Western Diamondback Rattlesnake
- Arizona-Sonora Desert Museum – Animal Fact Sheet: Western Diamondback Rattlesnake
- Statement of Rashik Azmain
- Rumor Scanner’s own analysis
|