schema:text
| - গত ০৬ নভেম্বর Al Minar নামের ইউটিউব চ্যানেলে “পুলিশ ও প্রধানমন্ত্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা। সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করবে আমেরিকা” শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়।
ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে(আর্কাইভ)।
পরবর্তীতে উক্ত ভিডিওটি ফেসবুকেও প্রচার করা হয়। ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পুলিশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি এবং দেশটি সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচনে আয়োজনের বিষয়েও কোনো মন্তব্য করেনি বরং ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ভিন্ন দুইটি ঘটনার ভিডিও ক্লিপ যুক্ত করে আলোচিত দাবি সম্বলিত উক্ত ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ১২ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে দুইটি ভিন্ন ভিডিওর খণ্ডাংশ দেখানো হয়। পরবর্তীতে, আলোচিত ভিডিওটিতে চ্যানেলটির উপস্থাপক দর্শকদের উদ্দেশ্যে দুটি ভিডিও দেখান, যেগুলোতে 1A News এর সম্পাদক কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন এবং সাবেক সাংসদ গোলাম মওলা রনি’র বক্তব্য রয়েছে।
প্রথম ভিডিও যাচাই
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে, 1A News এর ফেসবুক পেজে গত ৩ নভেম্বর “হঠাৎ পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে পিটার হাসের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের রহস্য কি?” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পায় রিউমর স্ক্যানার টিম।
৬ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় কাজী হেমায়েত উদ্দিন মিশন গত ২ নভেম্বর জাতীয় দৈনিক মানবজমিনের “মোমেনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন পিটার হাস” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনাচ্ছেন।
দ্বিতীয় ভিডিও যাচাই
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনি’র ফেসবুক পেজে গত ২ নভেম্বর “পিটার হাস কি ব্যর্থ হবেন ! ড্যান মজিনার পরিণতি ঘটানোর চেষ্টা! আমেরিকাকে উচিত শিক্ষা দিবে আ.লীগ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
১৫ মিনিট ৬ সেকেন্ডের উক্ত ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, সাবেক সাংসদ গোলাম মওলা রনি দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা এবং বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে ব্যক্তিগত মতামত ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।
অর্থাৎ, ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিওটিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার যে ভিডিও ক্লিপগুলো যুক্ত করা হয়েছে সেগুলোতে আগামী নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা এবং অবস্থান নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পুলিশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচনে আয়োজন বিষয়ক কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া, বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যম কিংবা অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পুলিশের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচনে আয়োজন বিষয়ক তথ্যের কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবরের রাজনৈতিক সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়,
২৮শে অক্টোবর ঢাকায় যে রাজনৈতিক সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তার নিন্দা জানায়। একজন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন রাজনৈতিক কর্মীহত্যা এবং একটি হাসপাতাল পোড়ানোর ঘটনা অগ্রহণযোগ্য। সাংবাদিকসহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতাও তেমনই। আমরা সব পক্ষকে শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানাই। সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞার জন্য আমরা সমস্ত সহিংস ঘটনার পর্যালোচনা করব।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত মে মাসে ভিসা নীতি ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে ভিসা নীতি কার্যকর করা শুরু হয়েছে। এই নীতির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করবে। এর মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
আরও উল্লেখ্য যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের র্যাব ও তার ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মূলত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এরই প্রেক্ষাপটে Al Minar নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে “পুলিশ ও প্রধানমন্ত্রীর উপর নিষেধাজ্ঞা। সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন করবে আমেরিকা” শীর্ষক শিরোনামে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। অধিক ভিউ পাবার আশায় চটকদার থাম্বনেইল ও শিরোনাম ব্যবহার করে কোনোপ্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়।
পূর্বে নির্বাচন কমিশনের নামে সেনাবাহিনীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চাওয়া সংক্রান্ত ভুয়া তথ্য প্রচারিত হলে সে বিষয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পুলিশের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা এবং সেনাবাহিনীর অধীনে নির্বাচন আয়োজন সংক্রান্ত ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিগুলো মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Facebook Page: 1A News
- মানবজমিন: “মোমেনের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন পিটার হাস”
- Facebook Page: Golam Maula Rony
|