schema:text
| - সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পোস্টের স্ক্রিনশট দাবিতে একটি স্ক্রিনশট প্রচার করা হয়েছে।
স্ক্রিনশটটিতে যা দেখা যাচ্ছে- অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের একটি ছবি প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’। উক্ত পোস্টটি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, “অস্বীকার হচ্ছে অপরাধীর প্রথম অস্ত্র। তারা যতো অস্বীকার করবে আমরা ততোবার ততোধিক উচ্চস্বরে স্মরণ করিয়ে দিবো কিভাবে দেশটা স্বাধীন হলো। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা সহজ নয়। বঙ্গবন্ধু আছেন কোটি বাঙালির হৃদয়ে।”
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্টটি প্রায় ২০ লক্ষ বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৯ হাজারটি পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে আলোচিত শিরোনামে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ছবি নয় বরং গণঅভ্যুত্থানে চোখ হারানো মানুষদের নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রচার করা হয়েছিল এবং সেটি শেয়ার করে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সেটির প্রেক্ষিতে ভিন্ন একটি ক্যাপশন লিখেছিলেন৷ মূলত ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় প্রধান উপদেষ্টার পোস্টটিতে সংযুক্ত ভিডিওটির পাশাপাশি মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর শেয়ারকৃত পোস্টের ক্যাপশন এডিট করে আলোচিত স্ক্রিনশটটি তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। আদতে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এরূপ কোনো ক্যাপশন লিখেননি।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় উক্ত ভিডিওটি চলতি বছরের গত ১২ নভেম্বরে পোস্ট করা হয়েছে এবং উক্ত পোস্টে সংযুক্ত স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে যে, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পোস্টটি তার একদিন আগে শেয়ার করা হয়েছে। এরই সূত্র ধরে গত ১১ নভেম্বর ও তার কাছাকাছি সময়ে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর অ্যাকাউন্টে প্রচারিত প্রতিটি পোস্ট পর্যবেক্ষণ করে দেখে রিউমর স্ক্যানার টিম৷ কিন্তু, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টের অনুরূপ কোনো পোস্ট শেয়ার করতে দেখা যায়নি। তবে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে চোখ হারানো মানুষদের নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র গত ১০ নভেম্বরে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করতে দেখা যায়।
পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা হয়, “’এসো দেশ বদলাই পৃথিবী বদলাই’ | জুলাই আমাদের সেই জিরো পয়েন্ট | যেখানে সব মত পথ এসে মিশে যায়। জুলাইয়ের গণ আন্দোলনে চোখ হারানো বন্ধুদের নিয়ে এই ট্রিবিউট ভিডিও। আমরা ভুলবো না কিছুই।” উক্ত ভিডিওটি পরদিন তথা গত ১১ নভেম্বরে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। পোস্টটির ক্যাপশনে ফারুকী লিখেন, “অস্বীকার হচ্ছে অপরাধীর প্রথম অস্ত্র। তারা যতো অস্বীকার করবে আমরা ততোবার ততোধিক উচ্চস্বরে স্মরণ করিয়ে দিবো কিভাবে আমাদের মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেলো, কিভাবে আমাদের গোলাভরা ফসল আর সাজানো ফুলদানি হারিয়ে গেলো, কিভাবে পলাশী এখনও আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে!”
তাছাড়া, প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজেও ‘এসো দেশ বদলাই পৃথিবী বদলাই’ ক্যাপশনে মাহফুজ আলমের ছবি সম্বলিত কোনো পোস্ট পাওয়া যায়নি। বরং উক্ত ক্যাপশনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে চোখ হারানো মানুষদের নিয়ে নির্মিত উক্ত ভিডিও চিত্রটি পাওয়া যায়৷
পাশাপাশি, ফেসবুকের একাধিক মনিটরিং টুল ব্যবহার করে অনুসন্ধানে এই দাবির পক্ষে সামাজিক মাধ্যমে মাত্র এই একটি স্ক্রিনশটই পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে দেখা যায়, পোস্টটি করার ১ দিনেরও বেশি সময় পার হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ও ফারুকীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে (ফারুকীর অ্যাকাউন্টে ফলোয়ার সংখ্যা সাড়ে ৯ লাখের অধিক এবং প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ) কোনো পোস্ট পরবর্তীতে সরিয়ে নিলেও আরও বহু স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ার কথা। অথচ কেবল এই একটি স্ক্রিনশটই সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করতে দেখা যায়, যার ফলে স্ক্রিনশটটি ভুয়া বলে প্রতীয়মান হয়।
এদিকে মাহফুজ আলমের ছবির প্রেক্ষাপটের অনুসন্ধান করলে মাহফুজ আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সূত্রে জানা যায়, বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানোর পর উক্ত ছবিটি আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তুলেছেন যা গত ১১ নভেম্বরে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ দুজনই তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছিলেন। অর্থাৎ, মাহফুজ আলমের পিছনের দেয়ালে আগে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকলেও পরবর্তীতে সেটি সরিয়ে নেওয়া হয় এবং আলোচিত ছবিটির পিছনের দেয়ালে সেই ছবিটি নেই। মূলত সেই প্রেক্ষিতেই মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর পোস্ট দাবিতে ভুয়া পোস্টটির ক্যাপশনটি লেখা হয়েছে।
অর্থাৎ, এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে গত ১০ নভেম্বরে প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ শীর্ষক ক্যাপশনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে চোখ হারানো মানুষদের নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রচার করার পর, সেই ভিডিও চিত্রের পোস্টটি ফারুকী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছিলেন “অস্বীকার হচ্ছে অপরাধীর প্রথম অস্ত্র। তারা যতো অস্বীকার করবে আমরা ততোবার ততোধিক উচ্চস্বরে স্মরণ করিয়ে দিবো কিভাবে আমাদের মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেলো, কিভাবে আমাদের গোলাভরা ফসল আর সাজানো ফুলদানি হারিয়ে গেলো, কিভাবে পলাশী এখনও আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে!” ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ফারুকীর এই পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে সেটির ক্যাপশন এডিট করে লেখা হয়, “অস্বীকার হচ্ছে অপরাধীর প্রথম অস্ত্র। তারা যতো অস্বীকার করবে আমরা ততোবার ততোধিক উচ্চস্বরে স্মরণ করিয়ে দিবো কিভাবে দেশটা স্বাধীন হলো। বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা সহজ নয়। বঙ্গবন্ধু আছেন কোটি বাঙালির হৃদয়ে।” পাশাপাশি একইসাথে প্রধান উপদেষ্টার প্রচারকৃত ভিডিওটির জায়গায় এডিট করে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের একটি ছবি সংযুক্ত করা হয়।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ শীর্ষক ক্যাপশনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ছবি প্রচার করা হয়েছে এবং উক্ত পোস্টটি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শেয়ার করে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা সহজ নয় শীর্ষক ক্যাপশনে পোস্ট করেছেন মর্মে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা এবং উক্ত দাবিতে প্রচারিত স্ক্রিনশটটি এডিটেড বা সম্পাদিত।
তথ্যসূত্র
- Mostofa Sarwar Farooki – Facebook Post
- Chief Adviser GOB – Facebook Post
- Rumor Scanner’s own analysis
|