schema:text
| - গত ২৪ জুন নীলফামারীর জলঢাকায় ২৯ বা ৩০টি বাচ্চাসহ একটি রাসেল’স ভাইপার সাপকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে মূলধারার কয়েকটি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি তথ্য প্রচার করা হয়।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ দেখুন : কালবেলা, নয়া দিগন্ত, দেশ রূপান্তর, জাগোনিউজ২৪, দৈনিক জনকন্ঠ, সংবাদ সারাবেলা, বাংলার জনপদ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত দাবি দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন : জাগো নিউজ।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নীলফামারীতে ২৯ বা ৩০টি বাচ্চাসহ পিটিয়ে মারা সাপটি তীব্র বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপার নয়, বরং এটি মৃদু বিষধর সাইবোল্ডের পাইন্না বা Siebold’s water snake সাপ, যার কামড়ে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই।
অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে অনলাইনে বিদ্যমান রাসেল’স ভাইপারের ছবি কিংবা গঠনগত বৈশিষ্ট্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটির পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। রাসেল’স ভাইপারের বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii এবং রাসেল’স ভাইপারের মাথার আকৃতি ত্রিকোণাকার এবং রাসেল’স ভাইপারের গায়ে স্পষ্ট গোলাকার অনেকটা চেইনের মতো দাগ থাকে৷ তাছাড়া, বাংলাদেশে প্রাপ্ত রাসেল’স ভাইপারে সাধারণত উজ্জ্বল আকৃতির বাদামি বর্ণের মধ্যে স্পষ্ট গোলাকার দাগ থাকে। উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটির সাথে মিলে না।
অপরদিকে প্রচারিত ছবিগুলোর সাথে সাইবোল্ডের পাইন্না বা Siebold’s water snake সাপের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। নানারকমের সাপের তথ্য প্রকাশ করা ওয়েবসাইট Indian Snakes এর একটি নিবন্ধ অনুসারে, সাপটির বৈজ্ঞানিক নাম Ferania sieboldii. এটি একটি মাঝারি আকারের সাপ যা ৭৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর শরীরটি মোটামুটি মোটা এবং চকচকে মসৃণ আঁশে আবৃত, এর লেজ সামান্য সংকুচিত। এর শরীরের উপরিভাগ প্রধানত গাঢ় জলপাই সবুজ বা বাদামী রঙের এবং পুরো শরীর জুড়ে অপ্রতিসম পূর্ণ বা অসম্পূর্ণ হালকা রঙের ব্যান্ড থাকে। এই ব্যান্ডগুলো সাধারণত শরীরের পাশের দিকে চওড়া হয়। এর নিচের অংশটি হলদেটে এবং গলা থেকে লেজ পর্যন্ত কালো রঙের ছোপ ছোপ দাগ থাকে। এর মাথা মাঝারি আকারের, গলার তুলনায় সামান্য চওড়া এবং গোলাকার নাক। এর চোখগুলো ছোট এবং উল্লম্বভাবে উপবৃত্তাকার চক্ষুতারা রয়েছে। নানারকমের জন্তুর তথ্য প্রকাশ করা অন্য আরেকটি ওয়েবসাইট Animalia তে উক্ত সাপটির প্রাপ্তিস্থান হিসেবে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমারের নাম উল্লেখ করা হয়।
উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে প্রচারিত ছবিটির মিল পাওয়া যায়৷ যা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিটি রাসেল’স ভাইপারের নয়, বরং সাইবোল্ডের পাইন্না বা Siebold’s water snake সাপের।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে সাপ ও সাপের উদ্ধার নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম Snake Rescue Team Bangladesh এর প্রেসিডেন্ট মোঃ রাজু আহমেদ ও জেনারেল সেক্রেটারি প্রিতম সুর রায়ের সাথে৷ উভয়ই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটি রাসেল’স ভাইপার নয়, বরং সাইবোল্ডের পাইন্না বা Siebold’s water snake সাপ বলে নিশ্চিত করেন।
মূলত, গত ২৪ জুন নীলফামারীর জলঢাকায় ২৯ বা ৩০টি বাচ্চাসহ একটি সাপের সন্ধান মেলে। রাসেল’স ভাইপার সন্দেহে সাপটিকে এলাকাবাসী পিটিয়ে হত্যা করে। এরই প্রেক্ষিতে এটিকে রাসেল’স ভাইপার সাপ দাবি করে মূলধারার কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। তবে অনুসন্ধানে জানা যায়, নীলফামারীতে ২৯ বা ৩০টি বাচ্চাসহ পিটিয়ে মারা সাপটি তীব্র বিষধর সাপ রাসেল’স ভাইপার নয়। প্রকৃতপক্ষে এটি মৃদু বিষধর সাইবোল্ডের পাইন্না বা Siebold’s water snake সাপ, যার কামড়ে মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই।
সুতরাং, নীলফামারীতে ২৯ বা ৩০টি বাচ্চাসহ সাইবোল্ডের পাইন্না সাপ পিটিয়ে মারার ঘটনাকে রাসেল’স ভাইপার সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে দাবিতে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Forestry – Russell’s Viper
- Indian Snakes – Siebold’s Water Snake (Ferania sieboldii)
- Animalia – SIEBOLD’S WATER SNAKE
- Statement of Md Raju Ahmed
- Statement of Pritom Sur Roy
- Rumor Scanner’s own analysis
|