schema:text
| - Fact Check: বাংলাদেশে মন্দির আক্রমণের নামে ভাইরাল হওয়া বিভ্রান্তিকর ভিডিওটি, একটি মাজারের এবং অন্যটি পশ্চিমবঙ্গের
বিশ্বাস নিউজের তদন্তে জানা গেছে যে প্রথম ভিডিওটি বাংলাদেশের মাজারে হওয়া ভাঙচুরের ভিডিও। আসলে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় অবস্থিত একটি মন্দিরে পরম্পরা অনুযায়ী 12 বছর পর মা কালীর মূর্তি ভেঙে সেটাই বিসর্জন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ভিডিওটি একই পরম্পরার ভিডিও। দুটি ভিডিও শেয়ার করে ভুল দাবি করা হচ্ছে।
- By: Sharad Prakash Asthana
- Published: ডিসে. 6, 2024 at 04:12 অপরাহ্ন
নতুন দিল্লি(বিশ্বাস নিউজ)। বাংলাদেশের বর্তমান উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে দুটি ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। তার মধ্যে একটি ভিডিওতে কিছু মানুষকে একটি স্থাপত্য ভাঙচুর করতে দেখানো হচ্ছে, আবার দ্বিতীয় ভিডিওটিতে কিছু মানুষকে দেবীর মুর্তি ভাঙতে দেখা যাচ্ছে। এই দুটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা মন্দিরে আক্রমণ করে ভাঙচুর করেছেন।
বিশ্বাস নিউজের তদন্তে জানা গেছে যে প্রথম ভিডিওটি বাংলাদেশের মাজারে হওয়া ভাঙচুরের ভিডিও। আসলে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় অবস্থিত একটি মন্দিরে পরম্পরা অনুযায়ী 12 বছর পর মা কালীর মূর্তি ভেঙে সেটাই বিসর্জন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ভিডিওটি একই পরম্পরার ভিডিও। দুটি ভিডিও শেয়ার করে ভুল দাবি করা হচ্ছে।
ভাইরাল পোস্টে কী আছে?
এক্স ব্যবহারকারী Manish Kasyap Son Of Bihar, ডিসেম্বরের 2 তারিখে ভিডিওটি শেয়ার করে(আর্কাইভ লিঙ্ক)এটিকে বাংলাদেশে হওয়া মন্দির আক্রমণের বলে জানিয়েছেন।
ফেসবুক ব্যবহারকারী Pushpendra Kulshrestha Fans একটি অন্য ভিডিও পোস্ট (আর্কাইভ লিঙ্ক)করে দাবি করেছেন যে এটি বাংলাদেশে সংঘটিত মন্দির আক্রমণের ভিডিও।
তদন্ত
দুটি ভিডিওর বিষয়ে আমরা আলাদা আলাদা ভাবে অনুসন্ধান করেছি।
প্রথম ভিডিও
প্রথম ভিডিওর কিফ্রেম বের করে সেটিকে গুগল লেন্সের সাহায্যে খোঁজার পর ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রবাসী জীবন -এর প্রোফাইলে ভাইরাল ভিডিওটি পাওয়া গেল। এটিকে 29 আগস্টে আপলোড করা হয়েছিল। পোস্টের সঙ্গে তথ্য দেওয়া হয়েছে যে, ভিডিওটি আলী হজরত বাবা আলী পাগলার মাজারের ভিডিও, যেটা কাজীপুরে অবস্থিত।
ফেসবুক ব্যবহারকারী দরবারে মাইজভান্ডার এটির সঙ্গে মিল থাকা ভিডিও 29 আগস্টে শেয়ার করেছেন। এটিতে ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া স্থাপত্য এবং সেটিকে ভাঙচুর করে লোকজন দেখা যাচ্ছে। এখানেও ভাইরাল ভিডিওটিকে কাজীপুরের অবস্থিত মাজারের ভিডিও বলা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিও সম্পর্কে অধিক তথ্যের জন্য আমরা বাংলাদেশের প্রোবশ টাইমসের সংবাদ সম্পাদক আরাফতের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। তিনি ভাইরাল ভিডিওটি মাজারে হওয়া ভাঙচুরের ভিডিও বলে জানালেন।
তিনি কালবেলা ডট কম-এর একটি সংবাদের লিঙ্কও পাঠালেন। এটিতে ব্যবহার করা ছবিতে ভাঙচুর করা ব্যক্তিটিকে দেখা যাচ্ছে। সংবাদ মতে, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে গ্রামবাসীরা দরগাহে ভাঙচুর করার জন্য মসজিদের ইমামকে বরখাস্ত করলেন। ইমাম গোলাম রব্বানী এবং তার সমর্থকেরা 29 আগস্টে আলী পাগলার দরগাহে ভাঙচুর করেছিলেন।
বাংলাদেশের ফেক্ট চেকার তনবীর মাহতাব আবিরও এই ভিডিওটি বাংলাদেশের কাজীপুরে অবস্থিত মাজারে হওয়া ভাঙচুরের ভিডিও বলে জানিয়েছেন।
এতে এটা স্পষ্ট যে, ভিডিওটিকে ভুল দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে। ভিডিওটি কোনো মন্দিরে আক্রমণের ভিডিও নয়, এটি মাজারে হওয়া ভাঙচুরের ভিডিও।
দ্বিতীয় ভিডিও
দ্বিতীয় ভিডিওটিতে লোকজনকে দেবী মূর্তি ভাঙতে দেখানো হয়েছে। ভিডিওটি কিফ্রেম বের করে সেটিকে গুগল লেন্সের সাহায্যে অনুসন্ধান করার পর ইনস্টা ব্যবহারকারী sumanhalder8951 এর প্রোফাইলে ভাইরাল ভিডিওটি পাওয়া গেল। এটি 28 নভেম্বরে শেয়ার করে সুলতানপুরের বলে জানানো হয়েছে। এখানে লেখা রয়েছে, 12 বছর পর কালী মায়ের বিসর্জন।
এই কিওয়ার্ডের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করার পর ইনস্টা ব্যবহারকারী alone_boy_aakash_20k দ্বারা শেয়ার করা ভিডিও পাওয়া গেল। এটির ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে মিল রয়েছে এবং 27 নভেম্বরে শেয়ার করা হয়েছে। এটাতে লেখা রয়েছে, 12 বছর পর মা ত্যাগ করলেন, এখন আবার এলেন মা।
জব সার্চ ইউটিউব চ্যানেলে 30 নভেম্বরে আপলোড করা ভাইরাল ভিডিওর একটি অংশকে অন্য এক ভাবে দেখা যেতে পারে। ভিডিওতে মন্দির এবং বাইরে জমা ভিড়ও দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওটিকে সুলতানপুরে প্রতি 12 বছর পর হওয়া পরম্পরার বলা হয়েছে।
দৈনিক স্টেটসমেন নিউজের ওয়েবসাইটে 21 অক্টোবরে প্রকাশিত সংবাদ মতে, পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের সুলতানপুরে 12 বছর পর মা কালীকে ভুলে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। এই আশ্চর্য পূজাটি শুধুমাত্র জেলা বা রাজ্যেই নয়, এমনকি দেশেরও অন্য কোথাও করা হয় না। এখানে মা তাঁর চার পুত্র-কন্যার সঙ্গে পূজিতা হন। এই মুর্তিটি 12 বছরে একবার তৈরি করা হয় এবং 12 বছর পর বিসর্জন করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই পুজাতে সব মানুষ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অংশগ্রহণ করেন। মুর্তির বিসর্জন চিরাচরিত পরম্পরা অনুযায়ী মন্দিরের লাগোয়া কালীমাতা পুকুরে করা হয়। এত বড় মূর্তিটিকে পুকুর পর্যন্ত আনা যাবে না। তাই এটিকে অল্প অল্প করে ভেঙে পুকুরের জলে বিসর্জন করা হয়।
বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকার তনবীর মাহতাব আবির বলেছেন যে, এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়।
এতে প্রমাণ হয়ে গেল যে, ভাইরাল ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের সুলতানপুরের একটি মন্দিরের পরম্পরার ভিডিও, যা ভুল দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে।
29 নভেম্বরে এএনআই-র এক্স হ্যান্ডেল থেকে বিদেশ মন্ত্রালয়ের প্রবক্তা রণধীর জয়েসওয়ালের ভিডিও বয়ান পোস্ট করা হয়েছে। এর মতে, ভারত সরকার বাংলাদেশে হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে। সেই সঙ্গে সেখানে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।
30 নভেম্বরে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ মতে, বাংলাদেশের চট্টগ্রামে আরও তিনটি মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে, যেটিকে পুলিশ ‘দুই সম্প্রদায়ের সংঘর্ষের ঘটনা’ বলে জানিয়েছে। চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় হরিশচন্দ্র মুনসেফ লেনের পাশে শান্তনেশ্বরী মাতৃ, শনি এবং শান্তনেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দিরে আক্রমণ করা হয়েছে। শনি মন্দির সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা জানিয়েছেন যে, অন্য দুটি মন্দিরের দ্বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশ এই ক্ষয়ক্ষতি সামন্য বলে জানিয়েছে এবং আইন ভঙ্গ হওয়ার জন্য দুই সম্প্রদায়ের লোকজনকে ‘পরস্পরের ওপর পাথর ছোঁড়ার’ দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
ভিডিওটিকে ভুল দাবির সঙ্গে শেয়ার করা এক্স ব্যবহারকারী-র প্রোফাইলটি আমরা স্ক্যান করেছি। বিশেষ মতাদর্শে বিশ্বাসী এই ব্যবহারকারীকে 1 লাখেরও অধিক মানুষ অনুসরণ করে।
উপসংহার: বাংলাদেশে মন্দির আক্রমণের নামে দুটি ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। তার মধ্যে একটি ভিডিও বাংলাদেশের মাজারে হওয়া ভাঙচুরের ভিডিও, আবার দ্বিতীয় ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের সুলতানপুরের একটি মন্দিরের ভিডিও, যেখানে পরম্পরা অনুযায়ী 12 বছর পর দেবী মুর্তি ভেঙে বিসর্জন করা হয় এবং সেই জায়গায় নতুন মুর্তি স্থাপন করা হয়।
- Claim Review : বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ মন্দিরে আক্রমণ করে সেখানে ভাঙচুর করেছে।
- Claimed By : X User- Manish Kasyap Son Of Bihar
- Fact Check : Misleading
Know the truth! If you have any doubts about any information or a rumor, do let us know!
Knowing the truth is your right. If you feel any information is doubtful and it can impact the society or nation, send it to us by any of the sources mentioned below.
|