schema:text
| - সম্প্রতি, ‘রাজধানীতে কাচ্চি বিরানির নামে খাওয়ানো হচ্ছে কুত্তা বিরিয়ানি’ শীর্ষক শিরোনামে বস্তায় বাঁধা কুকুরসহ কিছু পাচারকারী জনতার হাতে ধরা পড়ার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় কাচ্চি বিরিয়ানির নামে কুকুরের বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছে দাবিতে প্রচারিত বিষয়টি সঠিক নয় বরং উক্ত দাবিতে ভারতের কিছু কুকুর পাচারকারীকে জনতা কর্তৃক আটকের ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে প্রথমে ভিডিওটির বিশ্লেষণে উঠে আসে কিছু সন্দেহজনক তথ্য। ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষুব্ধ জনতা কুকুর পাচারকারীদের ঠিকানা জানতে চাইলে তাদের মধ্যে একজন বলেন “আলগাপুর” এবং আরেকজন বলেন “করিমগঞ্জ”।
এই স্থানগুলোর উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, আলগাপুর ভারতের আসাম অঙ্গরাজ্যের হাইলাকান্দি জেলার একটি শহর। করিমগঞ্জও আসামের একটি প্রশাসনিক জেলা।
ভিডিওতে কুকুর পাচারের কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়িও দেখানো হয়। গাড়ির নম্বর প্লেটে লেখা ছিল – ‘AS 10E 29 13’। উল্লেখযোগ্যভাবে, এ ধরনের নম্বর প্লেট বাংলাদেশের গাড়িতে ব্যবহৃত হয় না।
পরবর্তীতে ভিডিওটি থেকে কিছু কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ‘Ashroy – Karimganj’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২২ মে ‘Another dog smuggling case rescued… 14 dogs rescued’ শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি মূলত ১০ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি লাইভ ভিডিও।
ভিডিওটিতে দাবি করা হয় যে, আসামের বিভিন্ন জায়গা থেকে কুকুর ধরে ভারতের অন্য রাজ্য মিজোরামে পাচার করা হয়। পরে এই কুকুরগুলো মেরে কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিডিওতে থাকা একজন ব্যক্তি জানান যে, পাচারকারীদের শিলচর, রামনগর নামক স্থানে ফাঁদে ফেলে ধরা হয়েছে। পরবর্তীতে জানা যায়, শিলচরও ভারতের আসাম রাজ্যে অবস্থিত।
একই ফেসবুক পেজ থেকে গত ২৩ মে একটি পোস্ট পাওয়া যায়। যেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘অপরাধীদের তাদের কর্মের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাছাড় পুলিশের সহযোগিতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
পরবর্তীতে আসাম ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য আসাম ট্রিবিউনে গত ২৩ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও একই কুকুর পাচারের বর্ণনা পাওয়া যায়।
উত্তর-পূর্ব ভারত ভিত্তিক গণমাধ্যম ইস্টমোজো এর ওয়েবসাইটে গত ০২ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২৯ ও ৩১ মে আসামে পরিচালিত অভিযানে পাচারকারীদের কাছ থেকে ৪৭টি কুকুর উদ্ধার করা হয়েছে। কয়েকটি সংগঠন ও চক্র আসাম থেকে কুকুর চুরি করে এবং এগুলোকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যে, বিশেষ করে নাগাল্যান্ড এবং মিজোরামে খাবার হিসেবে গ্রহণের জন্য পাচার করে।
এই বিষয়টির সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে, ভারতীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুতে ২০২০ সালের ০৩ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের নাগাল্যান্ড সরকার রাজ্যে কুকুরের মাংসের বাণিজ্য ও ভোজন নিষিদ্ধ করেছে। একই বছরের মার্চে মিজোরাম সরকারও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতীয় প্রাণী সুরক্ষা সংস্থা (FIAPO) এর তথ্যমতে, কুকুরগুলো নিয়মিতভাবে আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে নাগাল্যান্ডে পাচার করা হয়। আসামে ৫০ টাকায় ধরা একটি কুকুর নাগাল্যান্ডের পাইকারি বাজারে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। নাগাল্যান্ডের রাস্তায় কুকুরের মাংস প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়, যা কুকুরপ্রতি প্রায় ২ হাজার টাকা।
তবে ২০২৩ সালের ০৬ জুন ভারতীয় গণমাধ্যম ফার্স্টপোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের গৌহাটি হাইকোর্ট নাগাল্যান্ড সরকারের কুকুরের মাংস নিষিদ্ধকরণের বৈধতা নিয়ে রায় দিয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুসারে, নাগাল্যান্ডে কুকুরের মাংস খাওয়া এবং বাণিজ্য আবারও বৈধ হয়েছে।
অন্যদিকে, টাইমস অফ ইন্ডিয়া ২০২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মিজোরাম সরকার কুকুরের মাংসের বিক্রি ও ভোজন নিষিদ্ধ করার জন্য সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। সমালোচকরা যুক্তি দেখিয়েছেন যে এই নিষেধাজ্ঞা সাংস্কৃতিক প্রথা ও জীবিকা হরণের সমতুল্য। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মিজোরামের রাজধানী আইজলে কুকুরের মাংস প্রকাশ্যে প্রতি কেজি ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
উপরোক্ত অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রতীয়মাণ হয়, আলোচ্য ভিডিওটি ভারতে কুকুর পাচারের একটি ঘটনার সাথে সম্পর্কিত। ভিডিওটির মাধ্যমে জানা যায় যে, আসামের বিভিন্ন স্থান থেকে কুকুর ধরে মিজোরামসহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পাচার করা হয়। মিজোরামে এসব কুকুর মেরে কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়।
মূলত, ঢাকায় কাচ্চি বিরানির নামে কুকুরের বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছে দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বস্তায় বাঁধা কুকুরসহ কিছু পাচারকারী জনতার হাতে ধরা পড়তে দেখা যায়। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটির সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রকৃতপক্ষে, আসামের বিভিন্ন স্থান থেকে কুকুর ধরে মিজোরামসহ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে পাচার করা হয় এবং সেখানে কুকুরগুলো কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়। আসামের এক ফেসবুক পেজে এমনই কিছু পাচারকারীদের ধরার ভিডিওটি লাইভ প্রচার করা হয়, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং দাবি করা হয় যে ঢাকায় কাচ্চি বিরানির নামে কুকুরের বিরিয়ানি খাওয়ানো হচ্ছে।
সুতরাং, আসাম থেকে মিজোরামে কুকুর পাচার করার সময় জনতার হাতে কুকুরসহ পাচারকারী আটক হওয়ার ঘটনাকে বাংলাদেশের ঘটনা বলে প্রচার করা হয়েছে, যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Facebook Live: Ashroy – Karimganj
- উইকিপিড়িয়া: শিলচরও
- Facebook Post: Ashroy – Karimganj
- The Assam Tribune: Assam: 14 dogs rescued from smugglers in Cachar, two detained
- EastMojo: 47 dogs rescued, illegal dog trafficking ring busted in Assam
- The Hindu: After Mizoram, Nagaland bans sale of dog meat
- Firstpost: Dog meat can again be sold in Nagaland after HC overturns 2020 ban
- THE TIMES OF INDIA: Mizoram draws flak for banning sale & consumption of dog meat
- Rumor Scanner Own Analysis
|