schema:text
| - সারমর্ম
একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোষ্টে আলোচনা করা হয়েছে খেজুর খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে । আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জেনেছি এই দাবি অনেকাংশে ভুল।
দাবি
স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার চারপাশে অনেকগুলি ঘরোয়া প্রতিকার ছড়িয়ে আছে, তার মধ্যে একটি পেইজে খেজুরের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, একটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছে যে এটি স্মৃতিশক্তিও বাড়াতে পারে.
সত্যানুন্ধান
খেজুরের মধ্যে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে?
খেজুর অনেকরকমের পুষ্টির উপাদানে ভরপুর, এর মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট (মূলত শর্করা জাতীয় উপাদান গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ), ফাইবার, ভিটামিন (যেমন ভিটামিন বি৬ ও ভিটামিন কে) এবং মিনারেল (যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার এবং ম্যাঙ্গানিজ)। এতে অল্প পরিমাণ প্রোটিন এবং ফ্যাটও আছে। এছাড়াও খেজুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস, এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভনয়েড, ক্যারোটেনয়েড ও ফেনোলিক অ্যাসিড ।
ডায়েটের মাধ্যমে কী স্মৃতিশক্তি বাড়ানো সম্ভব?
স্মৃতিশক্তির ওপরে ডায়েটের প্রভাব কিছুটা থাকতে পারে। সুষম খাবার খাওয়া্র মাধ্যমে, এর মধ্যে থাকবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি৬, বি১২ এবং ফলেট এবং এর সঙ্গে থাকবে অন্যান্য পুষ্টির উপাদান যা মস্তিষ্ককে ভালো রাখতে ও জ্ঞান সংক্রান্ত কাজকর্ম ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বাদাম, বিভিন্ন রকম বেরি জাতীয় ফল, দানা শস্য, স্যামন ও সবুজ শাক-পাতা হল খুব উপকারী খাদ্য উৎস। যদিও পুষ্টি একটা বড় অংশ, কিন্তু অন্যান্য কিছু বিষয় যেমন বংশগতি, জীবন ধারা ও সাধারণ স্বাস্থ্যও স্মৃতিশক্তিতে প্রভাব ফেলে।
খেজুর খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে এটা কী সত্যি?
মানে, ঠিক তা নয়। খেজুর থেকে শরীর স্বাস্থ্যকে ভালো রাখার অনেকরকম উপকারিতা রয়েছে কিন্তু, স্মৃতিশক্তি সত্যি সত্যি বাড়ে কিনা তার জন্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সংখ্যা কিন্তু সীমিত।
২০১৮য়, এক গবেষণায় বলা হয়েছে খেজুরের সাধারণ শর্করা যেমন গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ মস্তিষ্কে সহজেই শক্তি তৈরি করে অল্প সময়ের জন্য স্মৃতিশক্তি বাড়ানোয় সাহায্য করতে পারে। পরীক্ষায় ইঁদুরকে খেজুর খাইয়ে তাদের মধ্যে স্মৃতিশক্তি ও শেখার ক্ষমতা বেড়েছে এমনটা দেখা গেছে। সেরকমই, প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরকে এক অংশকে খেজুর খাওয়ানোর পর তাদের পরবর্তী পরীক্ষার ফল যাদের ওপর এই পরীক্ষা করা হয়নি তাদের থেকে ভালো হয়েছে। এছাড়াও ২০১৫ র গবেষণায় দেখা গেছে অনেকদিন ধরে খেজুর খাওয়ালে অ্যালঝাইমার রোগ আছে এমন ইঁদুরের স্মৃতিশক্তি, শেখার ক্ষমতা ও কাজের সমন্বয় বাড়ে। খেজুরের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ফেরুলিক অ্যাসিড এই ধরণের উপকারী ফলাফলের জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়, যা অ্যালঝাইমার রোগে উদ্বেগের উপসর্গগুলির লক্ষণ কমায়।
২০১৪ সালের খেজুরের নির্যাসের ওপর গবেষণায় প্রাথমিক ভাবে বলা হয় ইঁদুরদের ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে স্মৃতিশক্তি বেড়ে গেছে। খেজুর স্কোপোলামিন প্ররোচিত অ্যামনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ কম করে এবং শেখার স্মৃতি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়, এর কারণ হয়ত খেজুরের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপাদানের জন্য। এছাড়াও খেজুর অ্যাসিটাইলকোলিন এস্টেরেজ কাজ কমায়, জ্ঞান সংক্রান্ত কার্যকারিতা বাড়ায়। এই ফলাফলগুলি খেজুরের স্মৃতি-বাড়ানোর প্রভাবগুলির দিকে ইঙ্গিত করে, সম্ভবত এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কোলিনার্জিক কাজকর্মের জন্যই এটা হয়।
২০১৫ সালে এক গবেষণায় অ্যালঝাইমার রোগের একটি মাউস মডেলে স্থান সংক্রান্ত স্মৃতি, শেখার ক্ষমতা এবং উদ্বেগে ওপর খেজুরের ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টের অনেক দিন ধরে ব্যবহারের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে খেজুরের সাপ্লিমেন্ট যে ইঁদুরগুলিকে দেওয়া হয়েছে তাদের শেখার এবং স্মৃতির ঘাটতি, কাজের সমন্বয়, এবং উদ্বেগ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এই ফলাফলে মনে করা হয় খেজুরে থাকা ফেরুলিক অ্যাসিড কম্পাউন্ড ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে, এডি-র ক্ষেত্রে উদ্বেগের উপসর্গ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এই প্রভাবগুলির পেছনের প্রক্রিয়া এবং ক্লিনিকাল এডি-র বেড়ে চলার গতি কমাতে বা প্রতিরোধ করতে এটির সম্ভাব্য কাজ বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।
যখন আমরা চৈতালি ভারতীয়, এমএসসি, ডায়াবেটিস ও কার্ডিয়াক নিউট্রিশনে স্পেশালাইজড ডায়াটেটিক্স -কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেন, খেজুর স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তার কিছু বৈজ্ঞানিক প্রমানসাপেক্ষ ভিত্তি রয়েছে, প্রাথমিকভাবে এর কারণ হল এই ফলের পুষ্টির উপাদানগুলি। খেজুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং মিনারেলসমৃদ্ধ যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং জ্ঞান সংক্রান্ত কার্যকারিতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু খেজুর ও স্মৃতিশক্তিকে নিয়ে সরাসরি গবেষণার সংখ্যা কম, গবেষণায় দেখা গেছে খেজুরে থাকা পুষ্টির উপাদানগুলি মস্তিষ্কের কাজকর্ম কমে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে ও স্মৃতিশক্তির কাজ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা মস্তিষ্ককে দ্রুত চাঙ্গা করে তোলে, এতে মনকে একত্র করা বা ফোকাস করা ও মনোযোগ বাড়ে। হয়ত খেজুর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিস্ময়কর কোন সমাধান নয়, কিন্তু সুষম খাদ্যতালিকায় এটিকে রাখলে তা মস্তিষ্ককে সামগ্রিকভাবে ভালো রাখতে ও এর কাজকর্মকে ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে।
|