schema:text
| - দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকদিন যাবত রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের আতঙ্ক বিরাজ করছে। যা নিয়ে সারাদেশেই ব্যাপক আলোচনাও চলছে। এর প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে রাসেল’স ভাইপারের ছবি দাবিতে একাধিক ছবি প্রচার করা হচ্ছে।
কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকতেও রাসেল’স ভাইপার সাপ দেখা গিয়েছে দাবিতেও সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কুতুবদিয়ায় পাওয়া রাসেল’স ভাইপার সাপ দাবিতে প্রচারিত চারটি ছবির মধ্যে তিনটি ছবিই এডিটেড এবং বাকি ছবিটি রাসেল’স ভাইপার সাপের নয় বরং এটি ভিন্ন একটি সাপের ছবি। তাছাড়া, কুতুবদিয়াতে এখন পর্যন্ত রাসেল’স ভাইপার পাওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে উক্ত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। পর্যবেক্ষণে পোস্টকৃত চারটি ছবির মধ্যে তিনটি ছবিই এডিটেড তা সহজেই বুঝা যাচ্ছিল। বাকী থাকা ছবিটিতে বিদ্যমান সাপের পরিচিতি নির্ণয়ে অনুসন্ধানের পরবর্তী পর্যায়ে, অনলাইনে বিদ্যমান রাসেল’স ভাইপারের ছবি কিংবা গঠনগত বৈশিষ্ট্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটির পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। রাসেল’স ভাইপারের বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii এবং রাসেল’স ভাইপারের মাথার আকৃতি ত্রিকোণাকার এবং রাসেল’স ভাইপারের গায়ে স্পষ্ট গোলাকার অনেকটা চেইনের মতো দাগ থাকে৷ তাছাড়া, বাংলাদেশে প্রাপ্ত রাসেল’স ভাইপারে সাধারণত উজ্জ্বল আকৃতির বাদামি বর্ণের মধ্যে স্পষ্ট গোলাকার দাগ থাকে। উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটির সাথে মিলে না।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপের ছবিটি পর্যবেক্ষণ করে এটি মৃদু বিষধর ডগ ফেসড ওয়াটার স্ন্যাক বা নোনাবোড়া বা জলবোড়া সাপের ছবি হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়।
Herpetofaunabd নামের একটি ওয়েবসাইটে ডগ ফেসড ওয়াটার স্ন্যাকের বৈজ্ঞানিক নাম বলা হয়েছে Cerberus rynchops এবং সাপটির মাথা প্রশস্ত, চোখ গুলো ছোট। সাপটির উপরের চোয়াল এটিকে কুকুরের মুখের ন্যায় চেহারা দিয়েছে। চোখ এবং নাকের অবস্থান মাথার বেশ উপরে। চোখ থেকে শুরু করে শরীরের পার্শ্বীয় অংশে একটি দীর্ঘ কালো রেখা থাকে। সাপটির শরীর মোটা এবং খসখসে আঁশযুক্ত। শরীরের পৃষ্ঠীয় রঙ ধূসর-বাদামী এবং কালো ছোপ ছোপ দাগ থাকে। পেটের দিক সাদা বা হালকা রঙের যেখানে গাঢ় ছোপ ছোপ দাগ থাকতে পারে বা নাও পারে।
এ বিষয়ে অধিকতর নিশ্চিত হতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে সাপ ও সাপের উদ্ধার নিয়ে কাজ করা প্ল্যাটফর্ম Snake Rescue Team Bangladesh এর প্রেসিডেন্ট মোঃ রাজু আহমেদ ও জেনারেল সেক্রেটারি প্রিতম সুর রায়ের সাথে৷ উভয়ই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সাপটি রাসেল’স ভাইপার নয়, বরং ভিন্ন সাপ বলে রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন। এছাড়া প্রিতম সুর রায় বলেন, ছবিটি ডগ ফেসড ওয়াটার স্ন্যাক বা নোনাবোড়া বা জলবোড়া সাপের ছবি হতে পারে।
তাছাড়া, কুতুবদিয়ায় রাসেল’স ভাইপার সাপ পাওয়ার পক্ষে কোনো সংবাদ মূলধারার গণমাধ্যমে বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, কক্সবাজার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দৈনিক কক্সবাজারে গত ২৫ জুন তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক জাহেদুল ইসলাম কাইছার সিকদার বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক গুজব ছড়াচ্ছে কতিপয় ফেক আইডি থেকে। (কুতুবদিয়া) উপজেলায় কোন রাসেলস ভাইপার সাপের অস্তিত্ব এখনো পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে শাহেদুল ইসলাম মনির নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে দাবিকৃত উক্ত পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে “এডিট করে রাসেল ভাইপার ছবি বসিয়ে দিয়ে কুতুবদিয়ার জনমনে আতংক সৃষ্টি করতেছে ছবি এডিট এবং তথ্যটি গুজব” ক্যাপশনে পোস্ট করতে দেখা যায়। তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, তিনি কুতুবদিয়ার স্থানীয় একজন সাংবাদিক।
মূলত, সাম্প্রতিক সময়ে কুতুবদিয়ায় রাসেল’স ভাইপার পাওয়া গিয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিছু ছবি পোস্ট করা হয়। যার মধ্যে তিনটিই এডিটেড যা সহজেই বোধগম্য এবং বাকী থাকা ছবিটিও রাসেল’স ভাইপারের নয় বরং ভিন্ন একটি সাপের ছবি। তাছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে কুতুবদিয়াতে রাসেল’স ভাইপার সাপ পাওয়ার পক্ষে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, কুতুবদিয়ায় রাসেল’স ভাইপার সাপ পাওয়া গেছে মর্মে প্রচারিত দাবি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Forestry – Russell’s Viper
- Herpetofauna Bd – Dog-faced Water Snake জলবোড়া
- Dainik Coxsbazar – কুতুবদিয়ায় রাসেলস ভাইপার নিয়ে গুজব
- Shahedul Islam Monir – Facebook Post
- Statement of Md Raju Ahmed
- Statement of Pritom Sur Roy
- Rumor Scanner’s own analysis
|