schema:text
| - সম্প্রতি, দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে হামলা করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এই ঘটনায় তার এক দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। গত ০৭ নভেম্বর অধিকৃত পশ্চিম তীর এলাকায় এই হামলা হয় বলে দাবি করা হয়েছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোতে।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখুন- সময় টিভি, কালবেলা, নিউজ২৪, ভোরের কাগজ, দেশ রূপান্তর, বাংলাদেশ জার্নাল, ডেইলি বাংলাদেশ, আজকের দর্পণ, বাংলাদেশ মোমেন্টস, ঢাকা টুডে, বিবার্তা২৪, বার্তা২৪।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজের পোস্টসহ আরও কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, মাহমুদ আব্বাসের উপর সাম্প্রতিক সময়ে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি বরং দেশটির একটি শরণার্থী শিবিরে মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের ঘটনার ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত দাবিটি নিয়ে যেসকল গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, সেসব খবরগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, খবরটির সূত্র হিসেবে রাশিয়ার বার্তা সংস্থা তাস, সিএনএন তুর্ক, দ্য গার্ডিয়ান এবং হুররিয়াত এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্রগুলো যাচাই করতে গিয়ে TASS এর ওয়েবসাইটে গত ০৭ নভেম্বর প্রকাশিত আলোচিত প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। ‘তাস’ও খবরটির সূত্র হিসেবে সিএনএন তুর্ক এবং হুররিয়াত এর নাম উল্লেখ করেছে।
তবে সিএনএন তুর্ক এর ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট সংবাদটি খুঁজে পাওয়া না গেলেও ইন্টারনেট আর্কাইভে সংবাদটি খুঁজে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার টিম। অর্থাৎ, সংবাদমাধ্যমটি এ সংক্রান্ত খবরটি প্রকাশ করে পরবর্তীতে তা সরিয়ে নিয়েছে।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম Hurriyet এর ওয়েবসাইটে অবশ্য এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি এখনও পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, Sons of Abu Jandal নামক একটি গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করেছে।
হুররিয়াত এর প্রতিবেদনটি পাওয়া গেলেও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম The Guardian এর ওয়েবসাইটে মাহমুদ আব্বাসের বিষয়ে এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
Hurriyet এর দাবিকৃত Sons of Abu Jandal নামক গ্রুপের হামলার দায় স্বীকার সংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে নির্ভরযোগ্য সূত্রে দাবিটির পক্ষে কোনো তথ্য মেলেনি।
তবে ফিলিস্তিনের সংবাদমাধ্যম Palestine Chronicle এর ওয়েবসাইটে গত ০৬ নভেম্বর গ্রুপটির বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়৷ এতে বলা হয়, গত ০৫ নভেম্বর গ্রুপটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বার্তায় মাহমুদ আব্বাসকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বিবৃতির বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়ে নিজের অবস্থান পরিস্কার করার জন্য ২৪ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়েছে গ্রুপটি। গ্রুপটির বার্তায় মাহমুদ আব্বাসকে আবু মাজেন (মাহমুদ আব্বাস এই নামেও পরিচিত) বলে অভিহিত করা হয়েছে।
প্যালেস্টাইন ক্রনিকল আরেক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, ‘সন্স অফ আবু জান্দাল’ গ্রুপের হুমকির খবর প্রকাশ্যে আসার (০৬ নভেম্বর) পরদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের একটি গাড়িবহরে হামলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক্সের (সাবেক টুইটার) কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে এই ঘটনাকে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের উপর একটি ‘হত্যার প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করা হয়, যেখানে আব্বাসের একজন দেহরক্ষী যুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করা হয়।
প্যালেস্টাইন ক্রনিকল লিখেছে, ইসরায়েলি সাংবাদিক এলিয়র লেভি অভিযোগ করেছেন যে একটি ফিলিস্তিনি সূত্র তাকে বলেছিল যে “ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনী একজন মাদক ব্যবসায়ীকে বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর সময় গুলি বিনিময় হয় এবং মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহর সে সময় কাছাকাছি ছিল।
এই তথ্যগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল মূলত এ সংক্রান্ত একাধিক ভিডিওকে ব্যবহার করে৷ এসব ভিডিও মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানেরই।
ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম ‘France24′ এই ভিডিও এবং প্রাসঙ্গিক দাবি নিয়ে গত ৯ নভেম্বর একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রচারিত ভিডিওটি শরণার্থী শিবিরে মাদক পাচারকারীদের উপর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের ঘটনার৷ এর সাথে মাহমুদ আব্বাসের উপর হামলার ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। এই ঘটনায় সেসময় ফিলিস্তিন নিরাপত্তা বাহিনীর সাতজন সদস্য আহত হন।
ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের একাধিক গণমাধ্যম সূত্রও (১, ২) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
তাছাড়া, গ্রীসের ফিলিস্তিন দূতাবাসও জানিয়েছে, মাহমুদ আব্বাসের উপর সেদিন (০৬ নভেম্বর) কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
মূলত, সম্প্রতি দেশের একাধিক গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে হত্যার চেষ্টা করা হলে তার এক দেহরক্ষী নিহত হয়েছেন। গত ০৭ নভেম্বর অধিকৃত পশ্চিম তীর এলাকায় তার গাড়িবহরে হামলার এই ঘটনা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। একইসাথে একই ঘটনার দাবিতে একাধিক ভিডিও-ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে জেনেছে, মাহমুদ আব্বাসের উপর সেদিন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে অবস্থিত জালাজোন শরণার্থী শিবিরে মাদক পাচারকারীদের উপর পুলিশি অভিযানের ভিডিওকে উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে শীর্ষক একটি দাবি গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- France24: Fake story about assassination attempt on Mahmoud Abbas goes viral
- protothema: Διαψεύδουν οι Παλαιστίνιοι την επίθεση κατά του Μαχμούντ Αμπάς
- Rumor Scanner’s own investigation
|