schema:text
| - গত ০৯ নভেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভিডিওটিতে ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারকে বলতে শোনা যায়, এতে আসামির তালিকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের নাম রয়েছে। ভিডিওটির এক পর্যায়ে তিনি তার বক্তব্য সংশোধন করে ‘মামলা’-র পরিবর্তে ‘অভিযোগ’ শব্দটি ব্যবহার করেন। তবে অভিযোগ দায়েরকারী সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ ভিডিওতে থাকা আরেক ব্যক্তি এটিকে মামলা বলেই দাবি করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এক্স-এ প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে মামলা দায়ের করার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী রোম সংবিধির ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে তাদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। যেটিকে মামলা দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে বাংলা ট্রিবিউন-এর ওয়েবসাইটে গত ৯ নভেম্বর ড. ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, গত ৮ নভেম্বর ব্যারিস্টার ও সলিসিটর নিঝুম মজুমদার, ব্যারিস্টার মনিরুল ইসলাম মঞ্জু, গভ ওয়াইজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস শাকির উদ্দিনের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, একইদিনে নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগটি দায়ের করেছেন।
ড. ইউনূস ছাড়াও ৬২ অভিযুক্তের মধ্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পাট ও বস্ত্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নাম উল্লেখসহ উপদেষ্টামণ্ডলীর সকল সদস্য। অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদ হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, আব্দুল হান্নান মাসউদ, হাসিব আল ইসলাম, আবু বাকের মজুমদারের নামও উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ‘কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করা ইউনূস সরকার গত ৫ থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মী, বাংলাদেশের বসবাসরত হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ এবং পুলিশ বাহিনীর উপর নির্মম গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ সংগঠিত করে।’ শীর্ষক তথ্যগুলো জানানো হয়। পাশাপাশি এসময় হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা এবং লাখ লাখ ঘরবাড়ি, সম্পদ ইত্যাদি বিনষ্ট করা হয় বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
একই ঘটনায় দেশিয় অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়। (১, ২, ৩)
আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের ওয়েবসাইটের কেস সেকশন অনুসন্ধান করেও সাম্প্রতিক সময়ের এমন কোনো মামলা দায়ের হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে দৈনিক আমাদের সময়-এর ওয়েবসাইটে গত ১১ নভেম্বর এটা কোনো মামলা না, এটা আইসিসির প্রসিকিউশন অফিসকে একটা পিটিশন : আসিফ নজরুল শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা কোনো মামলা না, এটা আইসিসির প্রসিকিউশন অফিসকে একটা পিটিশন লিখে জানানো। এটা পৃথিবীর যে কোনো মানুষ করতে পারে। এটা এতই অবিশ্বাস্য ও বস্তুনিষ্টহীনতামূলক, কোনোভাবেই এটা গৃহীত হওয়ার কারণ নেই। তারা (আওয়ামী লীগ) জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য, নিজেদের কর্মীদেরকে মিথ্যাভাবে প্ররোচিত করার জন্য এটা করেছে।’
অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে দায়ের করা অভিযোগকে মামলা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সুতরাং, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে সংখ্যালঘুদের উপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে মামলা করা হয়েছে দাবিতে প্রচারিত তথ্যটি বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- Bangla Tribune Website: ড. ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ
- ICC Website: cases | International Criminal Court
- Amader Shomoy Website: এটা কোনো মামলা না, এটা আইসিসির প্রসিকিউশন অফিসকে একটা পিটিশন : আসিফ নজরুল
- Rumor Scanner’s Analysis
|