schema:text
| - গত ৩০ অক্টোবর গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কতিপয় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, পোশাক কারখানাটির মালিক চিত্রনায়ক ও ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল।
উক্ত দাবিতে গণমাধ্যমের কিছু প্রতিবেদন দেখুন এসএ টিভি (ফেসবুক), কালবেলা (ফেসবুক), বাংলা ইনসাইডার, সময়ের কণ্ঠস্বর, ক্যাম্পাস টাইম.প্রেস (ফেসবুক)।
কতিপয় গণমাধ্যম উক্ত দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে পরবর্তীতে সংশোধন করেছে। পূর্বের সংস্করণটির আর্কাইভ পাওয়া যায়নি। এমন কিছু গণমাধ্যম হচ্ছে প্রথম আলো, চ্যানেল২৪, ঢাকা মেইল, রাইজিং বিডি, বায়ান্ন টিভি।
একই দাবিতে গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজসহ অন্যান্য কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এবিএম ফ্যাশন লিমিটেডের মালিক অনন্ত জলিল নয় বরং পোশাক কারখানাটি অনন্ত কোম্পানিজ নামে ভিন্ন একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকানাধীন।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানের শুরুতে অনন্ত জলিলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ৩০ অক্টোবর প্রকাশিত একটি পোস্ট (আর্কাইভ) নজরে আসে আমাদের।
অনন্ত পোস্টে লিখেছেন, ” গাজীপুরে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় অনন্ত জলিলের কারখানায় আগুন, প্রথম আলোর এই নিউজটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে আমার কোন ফ্যাক্টরি নেই। আমার দুটি গ্রুপ অফ কোম্পানী, একটি এ জে আই গ্রুপ এবং আরেকটি এ বি গ্রুপ, দুটিই সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত।
অনন্ত লিখেছেন, “জাগো নিউজ সঠিক নিউজটি করেছেন। তারা সঠিক ইনফরমেশনটি দিয়েছেন।”
অনন্ত জলিলের পোস্টের সূত্র ধরে জাগোনিউজ২৪ এর প্রতিবেদনটি খুঁজে বের করেছি আমরা। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, “গাজীপুরের কোনাবাড়িতে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কারখানার গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।” তবে কারখানাটির মালিকের বিষয়ে প্রতিবেদনে কোনো তথ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
আমরা পরবর্তী অনুসন্ধানে নেমে ফেসবুকে কোনাবাড়ীর একটি গ্রুপে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হওয়া এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড কারখানাটির লে-অফ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি (আর্কাইভ) খুঁজে পেয়েছি। এবিএম ফ্যাশনের মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা সারাহ নাফিসা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কারখানাটি ৩০ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে কারখানাটির মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে Ananta Companies এবং ওয়েবসাইটের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে https://www.ananta.com.bd/।
ওয়েবসাইটটি থেকে জানা যাচ্ছে, অনন্ত কোম্পানিজের অধীনে এবিএম ফ্যাশন ছাড়াও আরও ছয়টি কারখানা রয়েছে যেগুলোর মধ্যে আশুলিয়ায় তিনটি, টঙ্গীতে দুইটি এবং যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে একটির অবস্থান রয়েছে।
এই ব্যবসায়ী গ্রুপটির বোর্ড অফ ডিরেক্টরের তালিকায় চেয়ারম্যান হিসেবে আমিনুল হক খান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে ইনামুল হক খান এবং ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে সাজেদুল করিমের নাম উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, এই তালিকায় অনন্ত জলিল নেই৷
অর্থাৎ, এবিএম ফ্যাশন বা অনন্ত কোম্পানিজের সাথে অনন্ত জলিলের সংশ্লিষ্টতা মিলছে না।
অন্যদিকে, অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন AJI Group এর ওয়েবসাইটে গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে অনন্ত জলিলের নামই উল্লেখ রয়েছে। এই গ্রুপের অধীনে তিনটি কারখানার তথ্য রয়েছে। তিনটি কারখানাই সাভারের হেমায়েতপুরে অবস্থিত।
এই ওয়েবসাইটেরই কোম্পানি প্রোফাইল থেকে পাওয়া তথ্যমতে, অনন্ত জলিলের এবি গ্রুপের অধীনে আরো দুইটি কারখানা রয়েছে যাদের অবস্থানও সাভারেই৷
অর্থাৎ, গাজীপুরে অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন কোনো কারখানা নেই।
মূলত, গত ৩০ অক্টোবর গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী এলাকায় বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভের সময় এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি তৈরি পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, পোশাক কারখানাটির মালিক চিত্রনায়ক ও ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল। কিন্তু রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কারখানাটির মালিক অনন্ত জলিল নয়। গাজীপুরে তার কোনো কারখানাই নেই৷ প্রকৃতপক্ষে, পোশাক কারখানাটি অনন্ত কোম্পানিজ নামে ভিন্ন একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকানাধীন যার চেয়ারম্যান আমিনুল হক খান।
সুতরাং, গাজীপুরে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামে অনন্ত কোম্পানিজ নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকানাধীন কারখানায় আগুন লাগার ঘটনাকে চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের পোশাক কারখানায় আগুন লেগেছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Ananta Companies: Website
- Aji Group: Website
- Ananta Jalil: Facebook Post
- Rumor Scanner’s own investigation
|