schema:text
| - গেলো বছর থেকে দেশীয় মূলধারার পত্রিকা দৈনিক বাংলার “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত একটি সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
২০২৩ সালে ফেসবুকে প্রচারিত এমন পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার অনুসন্ধানে জানা যায়, “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় কখনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি বরং ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত “সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি” শিরোনামের একটি সংবাদ প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে আলোচ্য সংবাদ প্রতিবেদনের ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
গুজবের সূত্রপাত
এ বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে, ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জিয়ার সৈনিক নিউজ টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে বিতর্কিত অস্ট্রিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফুদার একটি ভিডিও (আর্কাইভ) পাওয়া যায়। এই ভিডিওতে সেফুদা দাবি করেন যে, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার পতিতালয়ে গিয়ে তার চশমার খাপ ভুলে ফেলে এসেছিলেন। এমন খবর বাংলাদেশের মূলধারার পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাবেও প্রকাশিত হয়েছে।”
২০২০ সালের ১৮ জুন দৈনিক ইনকিলাবকে সূত্র দেখিয়ে ‘BM Juwel’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে একই বিষয় (আর্কাইভ) ফেসবুকে প্রচার করা হয়।
পরবর্তীতে, দৈনিক ইনকিলাব এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেছিল না সে বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করি আমরা। প্রথমত, গুগলে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে সার্চ করা হয়। এছাড়া, দৈনিক ইনকিলাবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং তাদের সামাজিক মাধ্যমের পেজগুলোও অনুসন্ধান করা হয়। এর পাশাপাশি, পুরোনো পত্রিকার অনলাইন সংরক্ষণাগার সংগ্রামের নোটবুক ওয়েবসাইট থেকে দৈনিক ইনকিলাবের পুরোনো পত্রিকা খুঁজেও দেখা হয়। তবে, একটি সূত্রেও দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত উল্লিখিত সংবাদটির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র রিপোর্টার মাইনুল হাসান সোহেলের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তিনি বলেন, “এমন নিউজ আমরা কখনো ছাপাইনি।”
পরবর্তীতে একই বিষয়ে ইনকিলাবের চিফ রিপোর্টার ফারুক হোসেনের সাথেও কথা বলেছি আমরা। তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘ ১২ বছর ইনকিলাবে আছি। এমন কিছু আমার চোখে পড়েনি। আর যদি এমন কিছু প্রকাশ হতো তাহলে বিষয়টি অনেক আলোচিত হতো। এমন ভিত্তিহীন একটা বিষয় আমাদের প্রচার করার সুযোগ নেই।”
২০২৩ সাল থেকে একই দাবিতে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ছবি প্রচার হতে দেখেছি আমরা। উক্ত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, জনপ্রিয় বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল পত্রিকায় শিরোনাম ছিল ‘সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি’।
ছবিটির বিবরণী থেকে জানা যায়, এটি ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট প্রকাশিত দৈনিক বাংলা পত্রিকার ছবি।
উক্ত তারিখের সূত্রে পুরোনো পত্রিকার অনলাইন সংরক্ষণাগার সংগ্রামের নোটবুক ওয়েবসাইট থেকে মূল পত্রিকাটি খুঁজে পাওয়া যায়। মূল পত্রিকায় দেখা যায় ‘সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটির বিষয়বস্তু ছিল সৌদি আরব ও সুদান থেকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি পাওয়া।
অর্থাৎ, ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক বাংলার প্রকাশিত “সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি” শিরোনামের সংবাদ বিকৃত করে “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শিরোনামে পরিবর্তন করা হয়েছে।
মূলত, সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত ও সমালোচিত ব্যক্তি সেফাতউল্লাহ ওরফে সেফুদা এক ভিডিওতে দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একবার পতিতালয়ে গিয়ে তার চশমার খাপ ভুলে আসেন এবং এই ঘটনা দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই দাবি পরবর্তীতে ফেসবুকে ইনকিলাবের সূত্রে প্রচারিত হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এমন কোনো সংবাদ ইনকিলাবে পাওয়া যায়নি এবং ইনকিলাবের সিনিয়র ও চিফ রিপোর্টার রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করেন এমন খবর তাদের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। এছাড়া, ২০২৩ সাল থেকে একই দাবিতে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ছবি প্রচার করা হয়। তবে, ২০২৩ সাল থেকে উক্ত দাবিতে প্রচারিত সংবাদের ছবিটিও ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে, ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত “সৌদী আরব ও সুদানের স্বীকৃতি” শিরোনামের একটি সংবাদ বিকৃত করে “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শিরোনামে পরিবর্তন করে উক্ত ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, “জাতির পিতার চশমার খাপ পতিতালয়ে” শীর্ষক শিরোনাম সম্বলিত দৈনিক বাংলা পত্রিকার আলোচ্য প্রতিবেদনের ছবিটি সম্পাদনা বা বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s own analysis.
- News archives from Songramer Notebook.
- Statement from Faruque Hossain, Chief Reporter, Daily Inqilab.
- Statement from Mynul Hasan Sohel, Senior Reporter, Daily Inqilab.
- Wikipedia.
|