schema:text
| - সম্প্রতি, সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক এবং এক্স অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেছেন ভিডিওর নারীকে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরার জন্য হেনস্তা করা হয়েছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে তিনি ক্যাপশনে লিখেছেন, “A woman being attacked for wearing western clothes. This is the freedom that #Yunus and student #coordinators have given #Bangladesh. They are turning it into another Pakistan”
সজীব ওয়াজেদ জয়ের পোস্টের পর ভিডিওটি ডাউনলোড করে আরও অনেকে পোস্ট করেন। একই ভিডিও আজম খান নামের অ্যাকাউন্ট থেকে ‘পোষাকের কারনে রাস্তায় একজন নারীকে শারীরিকভাবে আক্রমন করা হয়েছে। প্রথমে কিছুলোক তাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে এবং ভিডিও করে। পরবর্তীতে তাকে মৌখিকভাবে এবং শারীরিকভাবে আক্রমন করে’ শিরোনামে পোস্ট করা হয়।
একই ভিডিও প্রচার করে ভারতের কিছু অ্যাকাউন্টের এক্স পোস্টে মেয়েটিকে হিন্দু দাবি করে হিন্দু নারীকে পোশাকের কারণে হেনস্তা করা হয়েছে বলে সাম্প্রদায়িক ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওতে থাকা মেয়েটিকে ওয়েস্টার্ন পোশাক পরার কারণে হেনস্তা করা হয়নি বরং, ঘটনাটি মূলত পার্কিং নিয়ে বিরোধের জেরে ঘটে। রাস্তায় চলাচলের সময় গাড়ি চালকের সাথে মেয়েটির পার্কিং সংক্রান্ত তর্ক-বিতর্কের সূত্রপাত হয়, যা পরবর্তীতে বিবাদে রূপ নেয়।
গত ৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭:৫৪ মিনিটে সজীব ওয়াজেদ তার এক্স (পূর্বে টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। পোস্টের মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যে ভিডিওটি আমাদের নজরে আসে এবং আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ শুরু করি। ভিডিওটির প্রথম দৃশ্যে দেখা যায়, একটি প্রাইভেট কারের সামনে একটি স্কুটি দাঁড় করানো রয়েছে এবং স্কুটির আরোহী একজন নারীর সঙ্গে প্রাইভেট কারের কারো যুক্তিতর্ক চলছে বলে ধারণা করা যায়। ভিডিওটির আরো বিশদ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এটি বেশ দূরের একটি ভবনের উপর থেকে ধারণ করা হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায় ঘটনাটি চলাকালীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে ভিডিও ধারণ করা হয়। তবে, ঘটনাটি পোশাক সংক্রান্ত বিতর্কের কারণে ঘটেছে নাকি অন্য কোনো কারণে, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে আরও অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিই।
অনুসন্ধানের মাধ্যমে Blossom by Shuchi নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ৮ অক্টোবর রাত ৮:৫৪ মিনিটে একই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে — এমন একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত রিল পোস্টে ভিডিওটি “গায়িকা মিলার বোন মিশা আজ মিরপুর ডিওএইচএস এ একটা গাড়ির ড্রাইভার এর সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়ায়। আজকে যদি ঘটনাটা উল্টা হত,জাস্ট এই মেয়ে যে ব্যবহারটা করেছে সেটা যদি ড্রাইভার করতো তাহলে তো নারীবাদীদের চিৎকারে থাকাই যেত না।” ক্যাপশনের শেয়ার করা হয়।
এই পোস্টের মাধ্যমে ঘটনাস্থল এবং ঘটনার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বিশেষত, ঘটনাটি মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় সংঘটিত হয়েছে বলে আমরা অধিকতরভাবে নিশ্চিত হতে পেরেছি।
পরবর্তীতে মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদের একাধিক সূত্রের সহায়তায় আমরা ঘটনাটির বিস্তারিত জানতে পারি। একই সঙ্গে, ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে আরও একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে সক্ষম হই আমরা। ফুটেজটি বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট হয় যে, মূল ঘটনার সূত্রপাত পার্কিং এবং ড্রাইভিং সংক্রান্ত বিরোধ থেকেই হয়েছে। পাশাপাশি, আমরা ভিডিওতে উপস্থিত মেয়েটির সাথেও সরাসরি কথা বলেছি। যদিও তার পরিচয় আমাদের কাছে নিশ্চিত, তবে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার্থে প্রতিবেদনে সেই পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না।
ডিওএইচএস পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটে গত ৭ অক্টোবর, সোমবার সকালে মিরপুর ডিওএইচএস-এর রোড-৯, এভিনিউ-৪ এলাকায়। ভিডিওতে দেখা নারী একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার সন্তান, এবং যার গাড়ির সাথে তার বিবাদ হয়, তিনিও একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা। ঘটনার সূত্রপাত হয় এভিনিউ-০২ এলাকায়, যেখানে গাড়ি পার্কিং নিয়ে প্রাইভেট কারের চালক এবং ভিডিওতে দেখা নারীর মধ্যে প্রথমে বাকবিতণ্ডা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মেয়েটি রোড-৯, এভিনিউ-৪ সিগন্যালে মিরপুর ডিওএইচএস পরিষদের কর্তব্যরত গার্ডের মাধ্যমে ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গাড়ি থামান।
এরপর উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চরম পর্যায়ে পৌঁছে এবং এক পর্যায়ে মেয়েটির মোবাইল কেড়ে নিয়ে তা রাস্তায় আছাড় দেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই হাতাহাতি শুরু হয়। এছাড়া একটি পৃথক ভিডিও ফুটেজ দেখে, মেয়েটি গাড়ির চালককে আক্রমণ করছেন বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
ঘটনাটি নিয়ে গাড়ির মালিক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর ঈসাহ রুহুল করিম, মিরপুর ডিওএইচএস কর্তৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা প্রধান জিএম সিকিউরিটিকে অবহিত করেন। তিনি নিজে কন্ট্রোল রুমে এসে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে, সেদিন সন্ধ্যায় ডিওএইচএস পরিষদে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে একটি সমঝোতা হয় বলে জানা গেছে।
এছাড়া, আমরা ভিডিওতে থাকা নারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তিনি জানান যে, যেহেতু ঘটনাটি সম্পূর্ণভাবে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয়, তাই তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে অনিচ্ছুক। তবে, তিনি এটুকু বলেন— “যা কিছু প্রচারিত হচ্ছে বা দেখানো হচ্ছে, তার বেশিরভাগই গুজব এবং এর পেছনে প্রকৃত ঘটনা আছে।” এছাড়াও, তিনি স্পষ্ট করে জানান যে, তিনি হিন্দু নন, বরং মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
সুতরাং, ভিডিওর ঘটনাটি ট্রাফিক-পার্কিং সম্পর্কিত, যার ফলে মেয়েটিকে পোশাকের কারণে হেনস্তা করা হয়েছে বলে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা। এছাড়াও, মেয়েটিকে হিন্দু দাবি করে প্রচারের বিষয়টিও মিথ্যা। মেয়েটি হিন্দু নয়, তিনি মুসলিম।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s investigation.
- Alternative videos of the same event.
- Statement of the woman in the video.
|