schema:text
| - চলতি বছরের গত ০১ জুলাই সরকারি সকল গ্রেডের চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলন শুরু করে, যা এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবির আন্দোলনে পরিণত হয়। প্রায় ৩৬ দিন ধরে চলা এই আন্দোলনে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, শ্রমিক, পুলিশসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি একটি কবরের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, প্রচারিত ছবিটি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত একজন পুলিশ সদস্যের কবরের, এবং রাজনৈতিক চাপের কারণে তার কবরে নামফলক লেখা যাচ্ছে না।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত কোনো পুলিশ সদস্যের কবরের নয় বরং, এই কবরটি ইয়ামিন নামে একজন শিক্ষার্থীর, যিনি আন্দোলনে পুলিশের হাতে নিহত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে Alamin Hossain Rafi নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে গত ১১ আগস্টে প্রচারিত একটি পোস্ট পাওয়া যায়৷ উক্ত পোস্টটিতে সংযুক্ত ছবিটির সাথে প্রচারিত ছবিটির হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়। ছবিটি সম্পর্কে পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা হয়, “পুলিশ ট্যাংক থেকে ফেলে দেয়া ছেলে টা ছিল ইয়ামিন। শহীদ ইয়ামিনের কবরের পাশে বসে আছে বিড়াল। হয়তো ওর পালিত হবে। আচ্ছা বলুন তো কতটা নৃশংস হলে একটি তাজা প্রাণ ওভাবে ফেলে দেয়া যায়, আর কতটা মর্মাহত হলে একটি বিড়াল এভাবে বসে থাকে। আমরা মানুষ হব কবে?” ক্যাপশনটি থেকে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি ইয়ামিন নামের একজনের কবরের।
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে চলতি বছরের গত ১৪ আগস্টে “‘পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে একজন জীবন্ত মানুষকে এভাবে কোনো মানুষ ফেলে দিতে পারে না’” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনে উক্ত কবরের ভিন্ন একটি ছবি পাওয়া যায়। ছবিটি সম্পর্কে বলা হয়, “ইয়ামিনের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করছেন তাঁর বাবা মো. মহিউদ্দিন।”
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, প্রচারিত ছবির কবরটি শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন নামে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থীর। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাভারের পাকিজা মডেল মসজিদের কাছে গত ১৮ জুলাই পুলিশের একটি সাঁজোয়া যানের ওপর থেকে তাকে টেনে নিচে ফেলা হয়। তিনি সাঁজোয়া যানের চাকার কাছে সড়কে পড়ে থাকেন। এরপর পুলিশের এক সদস্য সাঁজোয়া যান থেকে নিচে নামেন। এক হাত ধরে তাকে টেনে আরেকটু দূরে সড়কে ফেলে রাখেন। পরে কয়েকজন পুলিশ মিলে তাকে টেনে সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে ঠেলে অপর পাশে ফেলে দেন।
একই ছবিটি দেশের কণ্ঠ নামের আরেকটি সংবাদমাধ্যমেও একই দাবিতে প্রচার করতে দেখা যায়।
ইয়ামিনের নিহত হওয়ার বিষয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডেও একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। “সাভার, ১৮ জুলাই: ইয়ামিনকে যেভাবে হত্যা করেছিল পুলিশ” শিরোনামে গত ১৬ আগস্টে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইয়ামিনের নিহত হওয়ার দৃশ্যটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সাভার প্রতিনিধি নোমান মাহমুদ। তার বর্ণনায়, গত ১৮ জুলাই দুপুরে সাভারের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলনের সময় শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন নামের এক শিক্ষার্থী পুলিশের এপিসির ওপর ওঠেন এবং সেখানে বুকের বাম পাশে ছররা গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন। এরপর পুলিশ সদস্যরা তাকে নির্মমভাবে এপিসি থেকে সড়কে ফেলে দেয়। আহত অবস্থায় তাকে সড়কে পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং জোরে জোরে শ্বাস নিতে দেখা যায়। পরে পুলিশ তাকে মূল সড়কের বিভাজক থেকে সার্ভিস লেনে ফেলে দেয়। পরে টিয়ারশেলের গ্যাসের কারণে সবাই তাকে ফেলে যেতে বাধ্য হন। প্রায় এক ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইয়ামিনের বুকে এবং গলায় ছররা গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়। তিনি এ আন্দোলনে সাভারে নিহত প্রথম শিক্ষার্থী।
সুতরাং, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীর কবরের ছবিকে আন্দোলনে নিহত হওয়া পুলিশের কবরের ছবি দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Alamin Hossain Rafi – Facebook Post
- Prothom Alo – ‘পুলিশের সাঁজোয়া যান থেকে একজন জীবন্ত মানুষকে এভাবে কোনো মানুষ ফেলে দিতে পারে না’
- The Business Standard – সাভার, ১৮ জুলাই: ইয়ামিনকে যেভাবে হত্যা করেছিল পুলিশ
- Rumor Scanner’s own analysis
|