schema:text
| - জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট রাতে তুলে নেওয়া হয়। দীর্ঘ আট বছর গুম থাকার পর, গত ৭ আগস্ট তিনি পরিবারের কাছে ফিরে আসেন। তার এই প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই তার দুই শিশুর সঙ্গে তোলা একটি ছবি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
এই ছবিটি শেয়ার করে অনেক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, আট বছর পর মুক্তি পাওয়ার পর তিনি তার চার বছর বয়সী ছেলে এবং ছয় বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। অন্য কিছু পোস্টে বলা হচ্ছে, গুম থেকে ফিরে আমান আযমী দেখেন তার পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে আছে।
এই পোস্টগুলোর মাধ্যমে মূলত ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে যে, ছবির শিশু দ্বয় আবদুল্লাহিল আমান আযমীর সন্তান। তিনি গুম থাকার সময়কালে তাদের জন্ম হয়েছিল।
প্রথম দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
দ্বিতীয় দাবিতে প্রচারিত কিছু ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, আবদুল্লাহিল আমান আযমীর সর্বকনিষ্ঠ দুই সন্তানের জন্ম তিনি গুম থাকা অবস্থায় হয়েছিল শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং তার গুম হওয়ার পূর্বেই এই দুই সন্তানের জন্ম হয়।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৮ আগস্ট ‘Tahsan Habib’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে প্রথমে ওই একই ছবি পোস্ট করা হয়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, “আফিফ আবদুল্লাহ এবং আকিফা আমাতুল্লাহ আযমী ভাইয়ার সাথে যিনি দীর্ঘ ১২ বছর আয়না ঘর গুম করে রাখা হয়েছে।”
একই আইডি থেকে অন্য একটি পোস্টেও দাবি করা হয়, “শহীদ আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম রাহিমাহুল্লাহর সুযোগ্য সন্তান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী ভাইয়া ১২ বছর আগে গুম হয়েছিলেন। তখন তার ছোট ছেলে আফিফ শিশু ছিল এবং জানতো না তার বাবা কোথায় আছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আজমী ভাইয়া ১২ বছর পর আয়না ঘর থেকে মুক্তি পেয়েছেন।”
যদিও পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়েছে আমান আযমী ১২ বছর ধরে গুম ছিলেন, বাস্তবে তিনি ৮ বছর গুম ছিলেন। তবে পোস্টগুলো থেকে ছবিতে থাকা দুই শিশুর পরিচয় সম্পর্কে জানা যায়। পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা আমান আযমীর ছেলে আফিফ আবদুল্লাহ এবং মেয়ে আকিফা আমাতুল্লাহ।
উক্ত পোস্টগুলোতে উল্লিখিত দুই শিশুর নামের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে আমান আযমীর ভাই সালমান আল-আযমীর ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি ব্লগ খুঁজে পাওয়া যায়। ব্লগে উল্লেখ রয়েছে যে, আমান আযমীকে সাড়ে তিন বছরের আকিফা এবং দেড় বছরের আফিফের সামনে থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, সেই সময় আমান আযমীর মেয়ে আকিফার বয়স ছিল সাড়ে তিন বছর এবং ছেলে আফিফের বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর।
এছাড়া, আমেরিকান সংবাদমাধ্যম হাফপোস্টে ২০১৭ সালে সালমান আল-আযমীর লেখা একটি ব্লগে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, তার ভাই আমান আযমীর সবচেয়ে ছোট দুই সন্তানের বয়স তখন (২০১৭ সালে) পাঁচ বছরের কম ছিল।
পরিবারের পক্ষ থেকেও ২০১৬ সালের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমান আযমীকে যখন তুলে নেওয়া হয়, তখন ঘরে উপস্থিত ছিলেন তার ৮৩ বছর বয়সী মা, স্ত্রী এবং তাদের ছোট দুই সন্তান, যাদের বয়স ছিল চার বছরেরও কম।
অনুসন্ধানের এই পর্যায়ে রিউমর স্ক্যানার আমান আযমীর ভাই সালমান আল-আযমীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। সালমান আল-আযমী নিশ্চিত করেন যে, ছবিতে থাকা শিশুরা আমান আযমীরই সন্তান। তিনি জানান, ২০১৬ সালে যখন আমান আযমীকে তুলে নেওয়া হয়, তখন তার মেয়ের বয়স ছিল ৩ বছর ৩ মাস এবং ছেলের বয়স ছিল ১ বছর ৯ মাস।
রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে আবদুল্লাহিল আমান আযমীর সাথেও কথা বলা হয়। তিনি জানান, তার মোট পাঁচ সন্তান রয়েছে, আর ছবিতে থাকা দুই শিশু তার সর্বকনিষ্ঠ দুই সন্তান। ছেলেটির নাম আফিফ এবং মেয়েটির নাম আকিফা। আমান আযমীর তথ্য অনুযায়ী, আফিফের জন্ম ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর এবং আকিফার জন্ম ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল।
এই তথ্য অনুসারে, আফিফের বর্তমান বয়স ৯ বছর ১০ মাস এবং আকিফার বর্তমান বয়স ১১ বছর ৫ মাস। অন্যদিকে, আমান আযমীকে আট বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৬ সালে, তুলে নেওয়া হয়েছিল। এর মানে, ছবিতে থাকা দুই শিশুর জন্ম আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে তুলে নেওয়ার অনেক আগেই হয়েছিল।
সুতরাং, আবদুল্লাহিল আমান আযমীর সর্বকনিষ্ঠ দুই সন্তানের জন্ম তিনি গুম থাকা অবস্থায় হয়েছিল দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner’s analysis.
- Facebook Post by Tahsan Habib – 1, 2
- Salman Al-Azami – আয়নাঘর থেকে আমার ভাইকে মুক্তি দিন!
- Huffpost – One year on – Amaan Azmi’s Family are still Crying for Justice
- Ghulam Azam – Official Family Statement on the Arrest of Ex-Brigadier General Amaan Azmi
- Statement of Abdullahil Aman Azmi.
- Statement of Salman Al-Azami.
|