schema:text
| - সম্প্রতি, এয়ারহোস্টেসের তিনটি ছবি কোলাজ করে এর সাথে একটি শিরোনাম যুক্ত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। শিরোনামে বলা হচ্ছে, “ফ্লাইটে পাইলট ঘোষণা করলো, আধা ঘণ্টার মধ্যে আমরা ল্যান্ড করতে যাচ্ছি। একথা বলার পর কিন্তু পাইলট মাইক বন্ধ করতে ভুলে গেলো এবং পাশে থাকা পাইলটকে বললো, এখন আমি প্রথমে গরম চা খাবো তারপর এয়ার হোস্টেস কে চুমু খাবো। একথা শুনে এয়ার হোস্টেস মাইক বন্ধ করার জন্য দৌড়াতে গিয়ে এক শিশুর পায়ে হোঁচট খেয়ে নিচে পড়ে গেলো। শিশুটি বলল, আপনার এতো ভেতরে যাওয়ার তাড়া কিসের!ও আগে চা খাবে বললো শোনোনি?”
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
টিকটকে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ),
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, এয়ারহোস্টেসের ভাইরাল ছবিগুলোর সঙ্গে থাকা গল্পটি সঠিক নয় বরং ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার দুইটি ছবি যুক্ত করে ভিত্তিহীন দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি ছবি ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ার এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইটে একজন চীনা যাত্রী কর্তৃক এয়ারহোস্টেসের দিকে গরম পানি ছুঁড়ে মারার। বাকি দুইটি ছবি ২০১৬ সালে রাশিয়ান এয়ারলাইনসে একদল ফুটবল অনুরাগী কর্তৃক একজন এয়ারহোস্টেসকে বিভ্রান্ত করার সময়কার।
ছবি যাচাই – ০১
আলোচিত দাবিতে থাকা ভাইরাল ছবিগুলোর বামদিকে থাকা প্রথম ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দৈনিক গণমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এর ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর “In Hot Water: Thai Flight Turns Around After Chinese Passenger Flips” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে থাকা প্রথম ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে ব্যাংকক থেকে নানজিংগামী এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটে একজন চীনা যাত্রীর সাথে এয়ারহোস্টেসের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই চীনা যাত্রী এয়ারহোস্টেসের দিকে গরম পানি ছুঁড়ে মারে। উক্ত ঘটনার একটি ছবিকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
একই তথ্য পাওয়া গেছে আরো একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
ছবি যাচাই ২ ও ৩
পরবর্তী ছবি দুইটি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ার টুডে’র ওয়েবসাইটে ২০১৬ সালের ২২ জুলাই “WATCH: Football fans distracting an air hostess doing a safety drill will leave you in stitches” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনের সর্বশেষ অংশে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। এই ভিডিওর দৃশ্যের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত বাকি দুইটি ছবির মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে রাশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে এয়ারহোস্টেস নিরাপত্তাবিষয়ক দিকনির্দেশনা দেওয়ার সময় ফ্লাইটে উপস্থিত একদল ফুটবল অনুরাগী তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছিলো। ওই সময়কার দুইটি স্থিরচিত্র আলোচিত দাবিতে প্রচারিত গল্পের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গণমাধ্যম কিংবা বিশ্বস্ত কোনো সূত্রে এয়ারহোস্টেস এবং পাইলটকে জড়িয়ে প্রচারিত আলোচ্য গল্পটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ, এয়ারহোস্টেসের ভাইরাল ছবিগুলো পুরোনো ভিন্ন ঘটনার। এর সাথে ভিত্তিহীনভাবে একটি গল্প জুড়ে দিয়ে প্রচার করা হয়েছে।
মূলত, ২০১৪ সালে ব্যাংকক থেকে নানজিংগামী একটি ফ্লাইটে একজন চীনা যাত্রীর সঙ্গে এয়ারহোস্টেসের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ওই চীনা যাত্রী এয়ারহোস্টেসের দিকে গরম পানি ছুঁড়ে মারে এবং ২০১৬ সালে রাশিয়ান এয়ারলাইনসে একদল ফুটবল অনুরাগী একজন এয়ারহোস্টেসকে নিরাপত্তাবিষয়ক নির্দেশনা দেওয়ার সময় তাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। উক্ত দুইটি ঘটনার কিছু স্থিরচিত্র কোলাজ করে এর সাথে একটি গল্প জুড়ে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিম অনুসন্ধানে দেখেছে যে,আলোচিত দাবিতে প্রচারিত গল্পটি ভিত্তিহীন এবং কোলাজ করা ছবিগুলো পুরোনো ভিন্ন ঘটনার।
সুতরাং, ভিন্ন ঘটনার দুইটি ছবি জুড়ে দিয়ে এয়ারহোস্টেস এবং পাইলটকে জড়িয়ে ইন্টারনেটে প্রচারিত বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।
তথ্যসূত্র
- THE WALL STREET JOURNAL : In Hot Water: Thai Flight Turns Around After Chinese Passenger Flips
- India Today : WATCH: Football fans distracting an air hostess doing a safety drill will leave you in stitches
CNN – Flight diverted after passenger reportedly throws hot water at crew member
The Star – Hot water thrown at flight attendant by passenger on Thai AirAsia flight
- Rumor scanner’s Own Analysis
হালনাগাদ/ Update
০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ : এই প্রতিবেদন প্রকাশ পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে একই দাবি সম্বলিত ভিডিও আমাদের নজরে আসার প্রেক্ষিতে কতিপয় টিকটক পোস্টকে প্রতিবেদনে দাবি হিসেবে যুক্ত করা হলো।
|