schema:text
| - সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি কাপড় দিয়ে চেহারা ঢেকে আরবি ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন এবং তার দুই পাশে অস্ত্র সদৃশ বস্তু নিয়ে মুখ ঢেকে আরও দুই জন কালো পোশাকে দাঁড়িয়ে আছেন। উক্ত ভিডিওটি প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে এবং জিহাদের ডাক দেওয়া হয়েছে।
উক্ত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ব্যক্তিরা আইএস এর বেশে উগ্রবাদ প্রচারকারী বা জঙ্গি দাবিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন। সজীব ওয়াজেদের পোস্টটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও শেয়ার করা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওটিতে জিহাদের ডাক দেওয়া হয়েছে দাবিতে লেখিকা তসলিমা নাসরিনও তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন।
এছাড়াও এরূপ দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
পাশাপাশি, উক্ত ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটিতে বাংলাদেশে অস্ত্র হাতে জঙ্গিদের সভা ও জিহাদের ডাক প্রদর্শিত হয়েছে। এরূপ দাবিতে প্রচারিত প্রতিবেদন দেখুন রিপাবলিক বাংলা, টিভি৯ বাংলা।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটির সাথে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান, সমাবেশ বা জিহাদের ডাকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রকৃতপক্ষে এটি ‘যশোর জামিয়া ইসলামিয়া’ নামের একটি মাদ্রাসার বার্ষিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের একটি অভিনয় বা প্রদর্শনীর দৃশ্য
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে মঞ্চের পেছনের অংশে থাকা ব্যানারে ‘যশোর জামিয়া ইসলামিয়া’ লেখা দেখা যায়। এই সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ‘এইচ এম আব্দুল্লাহ যশোর’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গত ১৭ ডিসেম্বরে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়, যা ফেসবুকে এই ভিডিওর প্রথম প্রচারিত সংস্করণ বলে প্রতীয়মান হয়।
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “যশোর জামিয়া ইসলামিয়া | বার্ষিক প্রতিযোগিতা ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান -২০২৪ | আরবী বক্তৃতা,,,সবাইকে দেখার অনুরোধ রইলো”।
উক্ত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটির বায়ো পর্যবেক্ষণে জানা যায়, অ্যাকাউন্টধারী নিজেকে যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের সহকারী জিম্মাদার হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে যশোর জামিয়া ইসলামিয়ার ফেসবুক পেজেরও সন্ধান পাওয়া যায়৷
ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, গতকাল (১৮ ডিসেম্বর) একটি ফেসবুক লাইভ সম্প্রচারে আলোচিত বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকি। তিনি জানান, প্রচারিত ভিডিওটি গত ১৭ ই ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে যশোর জামিয়া ইসলামিয়ার বাৎসরিক আঞ্জুমান অর্থাৎ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ভিডিও, যার সাথে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই৷ তিনি আরও জানান, হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ বস্তুটিও আসল আগ্নেয়াস্ত্র নয় বরং শোলা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
এছাড়া, উক্ত ফেসবুক পেজে যশোর জামিয়া ইসলামিয়ায় বার্ষিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের একটি পোস্টার গত ১৫ ডিসেম্বরে শেয়ার করা হয়েছে। তবে, অনুষ্ঠানটির নির্দিষ্ট তারিখ পোস্টারটিতে উল্লেখ করা হয়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তর জানতে রিউমর স্ক্যানার যোগাযোগ করে যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মাগফুর রহমানের সাথে। তিনি জানান, প্রচারিত ভিডিওটি গত ১৭ ও ১৮ ডিসেম্বরে ছাত্রদের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের৷ এ জায়গায় হামদ নাত, ক্বিরাত, হিফজুল প্রতিযোগিতা, বাংলা ও আরবি বক্তৃতা, যেমন খুশি তেমন সাজো এসব বিভিন্ন বিষয়ে প্রদর্শনী হয়েছে। প্রচারিত ভিডিওটি এরকমই একটি প্রদর্শনীর অংশ ছিল। প্রদর্শনীটির প্রেক্ষাপট ছিল বর্তমান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন পরিস্থিতি। ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা করছে এবং নারী, শিশু, অসহায়, বৃদ্ধদের হত্যা করছে। ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে। এসব বিষয়ে ছাত্রটি আরবিতে বক্তৃতা দিয়েছে। ছাত্রটি বলেছে, অসহায় দরিদ্র এসব মা-বোনের যাতে ইজ্জত নষ্ট না হয়, তারা যেন আর না মরে৷ আমরা মুসলমানরা যেন তাদের প্রতি সোচ্চার থাকি। এ বিষয়ে প্রচারিত দাবিটি ভুয়া এবং তা থানা থেকে এসেও ইতোমধ্যে যাচাই করা হয়েছে।
পাশাপাশি মুফতী মাগফুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘মুফতী মাগফুর রহমান যশোরী’ পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বরে একই মঞ্চ থেকে উক্ত অনুষ্ঠানের একাধিক লাইভ ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। তার মধ্যে কিছু পোস্টে মঞ্চের পেছনের ব্যানারের পুরো লেখাটিও দৃশ্যমান হয়েছে৷
এদিকে, ভিডিওটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনলাইন সংবাদমাধ্যম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে প্রচারিত ভিডিওটি ভুয়া দাবি করে মন্তব্য করেন যশোর কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক। তবে পরবর্তীতে এ বিষয়ে আজ (১৯ ডিসেম্বর) যশোর জেলা পুলিশ তাদের ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও প্রচার করেছে। পোস্টটি থেকে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটির বিষয়ে যশোর জেলা পুলিশের একাধিক টিম অনুসন্ধানে জেনেছে যে, গত ১৭ই ডিসেম্বর উক্ত মাদ্রাসায় বার্ষিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান-২০২৪ এর প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে অত্র প্রতিষ্ঠানের তিনজন ছাত্র যেমন খুশী তেমন সাজো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এবং এই ভিডিওটি তারই অংশ। যশোর জেলা পুলিশ উক্ত মাদ্রাসায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র সদৃশ বস্তু দেখতে পায়, যা কর্কশিট ও কাঠ দিয়ে তৈরি।
সুতরাং, যশোরের জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার একটি প্রতিযোগিতার প্রদর্শনীর ভিডিওকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের প্রচারণা হিসেবে দাবি করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র
- H M Abdullah Jessore – Facebook Post
- যশোর জামিয়া ইসলামিয়া – Facebook Post
- মুফতি মাগফুর রহমান যশোরী – Facebook Post
- District Police Jashore – Facebook Post
- Statement of Magfur Rahman, Education Secretary, Jessore Jamea Islamia
- Rumor Scanner’s analysis
|