schema:text
| - সম্প্রতিক “শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলা নিয়ে নেদারল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল আই সি সি কোর্টে শুনানি বসেছে আজ” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই পোস্টগুলোর মাধ্যমে মূলত গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার দায়ের করা মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) শেখ হাসিনার করা মামলার শুনানি হচ্ছে বলে প্রচারিত দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই সংক্রান্ত ভাইরাল ভিডিওটি মূলত ১৯৯৯ সালে ন্যাটোর বিমান হামলার পর যুগোস্লাভিয়া কর্তৃক আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলার শুনানির।
দাবিকৃত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রধান কার্যালয় পিস প্যালেস এবং যুগোস্লাভিয়ার নামের একটি নেমট্যাগ দেখা যায়। এছাড়াও, ভিডিওতে দুজন বক্তা বক্তব্য রাখেন, যেখানে ‘ন্যাটো’, ‘যুগোস্লাভিয়া’, এবং ‘কসোভো’ শব্দগুলো উল্লেখ করা হয়। তবে ভিডিওতে শেখ হাসিনা বা বাংলাদেশ সম্পর্কিত কোনো শব্দ উল্লেখ করতে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে তাদের বক্তব্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিডিওটির মূল উৎস অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (AP) আর্কাইভ ইউটিউব চ্যানেল। সেখানে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই “NETHERLANDS: WORLD COURT YUGOSLAVIA/NATO HEARING LATEST” শিরোনামে এই ভিডিও আপলোড করা হয়েছিল। এটি মূলত ১৯৯৯ সালের ১১ মে তারিখে কসোভোতে ন্যাটোর বিমান হামলা নিয়ে যুগোস্লাভিয়ার করা মামলার শুনানি সংক্রান্ত একটি ভিডিও।
ভিডিওটির বর্ণনা থেকে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে যুগোস্লাভিয়া ন্যাটোর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অভিযোগ করে, যেখানে ন্যাটোর বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়। ন্যাটোর পক্ষে জার্মানি যুক্তি দেয়, হামলা বন্ধ হলে কসোভোতে জাতিগত নিধন আরও বাড়বে। ভিডিওটি সেই শুনানিরই ফুটেজ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থা রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টি-এর ওয়েবসাইটে ১৯৯৯ সালের ৯ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, ১৯৯৯ সালে কসোভোতে ন্যাটোর বিমান হামলার পর যুগোস্লাভিয়া আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অভিযোগ দায়ের করে, যেখানে তারা ন্যাটোর বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। ন্যাটো এই হামলাকে মানবিক বিপর্যয় ঠেকানোর একটি পদক্ষেপ বলে দাবি করে।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ১৯৯৯ সালে কসোভো যুগোস্লাভিয়ার অধীনে ছিল। তবে ২০০৮ সালে কসোভো স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
এছাড়া, আইসিসিতে শেখ হাসিনা কোনো মামলা দায়ের করেছেন কিনা তা অনুসন্ধানে দেশিয় বা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বরং, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনে হত্যা ও সহিংসতার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড লেমিকে মানবাধিকার সংগঠন ‘জাস্টিস ফর বাংলাদেশ’ চিঠি দিয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে।
সুতরাং, “শেখ হাসিনার দায়ের করা মামলা নিয়ে নেদারল্যান্ডস ইন্টারন্যাশনাল আই সি সি কোর্টে শুনানি বসেছে” শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
|