schema:text
| - সম্প্রতি শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকে দাবি প্রচার করা হচ্ছে, “চীন বাংলাদেশকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সৈন্য ও ১ লক্ষ ৩০ হাজার অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং ২৪ ঘন্টার ভিতরে ভারতের ওপর আক্রমণ করবে বলে জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাপ্রধান।”
উক্ত দাবিতে টিকটকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়া অবধি উক্ত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি প্রায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৩২ হাজার পৃথক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটিতে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চীন বাংলাদেশকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সৈন্য ও ১ লক্ষ ৩০ হাজার অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং বাংলাদেশ সেনাপ্রধান জানিয়েছেন ২৪ ঘন্টার ভেতর ভারতকে আক্রমণ করবে বাংলাদেশ শীর্ষক দাবিগুলো ভুয়া, বরং কোনোরকমের বিশ্বস্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো বিশ্বস্ত তথ্যপ্রমাণের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। অতঃপর, প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও আলোচিত দাবিটির সপক্ষে কোনো বিশ্বস্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশে চীনা সেনা আসার বিষয়ে চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে সর্বশেষ সংবাদ পাওয়া যায়। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার বরাতে বাংলাদেশি মূলধারার সংবাদমাধ্যম দৈনিক ইনকিলাবে গত ২৮ এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রথমবার একসঙ্গে সামরিক মহড়া করতে চলেছে চীন ও বাংলাদেশ। এবার সামরিক ক্ষেত্রেও ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করতে উদ্যোগী হয়েছে বেইজিং। তাছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি বিষয়ক আন্তর্জাতিক অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিন দ্য ডিপ্লোম্যাটেও এ বিষয়ে উল্লেখ পাওয়া যায়৷ গত ০৬ মে তারিখে দ্য ডিপ্লোম্যাটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মে মাসের প্রথমদিকে প্রথমবারের মতো চীন ও বাংলাদেশ একটি যৌথ মহড়া করতে যাচ্ছে। এছাড়া, বাংলাদেশের হয়ে ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে চীনা সৈন্য আসার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণই পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, যুদ্ধ করতে চীন বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠাচ্ছে কি না তা অনুসন্ধানে সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশ পরস্পরের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করা বেশ কিছু প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও যুদ্ধ করতে বাংলাদেশে অস্ত্র পাঠানোর বিষয়েও কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। যেমন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের আগে গত ৭ জুলাই তারিখে মূলধারার গণমাধ্যম বিবিসি বাংলাতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জামও কিনে থাকে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে চীন থেকে দু’টি সাবমেরিনও কিনেছে দেশটি।
কিন্তু সেই সময়ের সংবাদেও চীন থেকে যুদ্ধের জন্য কোনো অস্ত্র আসার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
৩ মাস পূর্বে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য স্টেটসম্যানে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ নানা সময়ে চীনের থেকে নানারকমের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে৷ গত দশক ধরে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে প্রায় ২.৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করেছে।
এছাড়া, এর পরবর্তী সময়ে চীন ও বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে গুরুত্ববহ তেমন কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ব্যবহৃত স্থিরচিত্রের উৎসের সন্ধান করলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিরর ও ব্রিটিশ স্টক কন্টেন্ট সরবরাহকারী অ্যালামির সূত্রে জানা যায়, ছবিটি ২০১৭ সালের ৩০ জুলাইয়ের যা চাইনিজ পিপল’স লিবারেশন আর্মির ৯০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে অনুষ্ঠিত হওয়া মিলিটারি প্যারেডের দৃশ্যের৷ অর্থাৎ, ছবিটির সাথেও বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।
তাছাড়া, বাংলাদেশ সেনাপ্রধানের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভারতে আক্রমণ করার ঘোষণা দেওয়ার দাবির সপক্ষেও বিশ্বস্ত সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, চীন বাংলাদেশকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার সৈন্য ও ১ লক্ষ ৩০ হাজার অস্ত্র পাঠাচ্ছে এবং ২৪ ঘন্টার ভিতরে ভারতের ওপর আক্রমণ করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাপ্রধান মর্মে প্রচারিত দাবিগুলো ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Daily Inqilab – প্রথমবার যৌথ সামরিক মহড়ায় চীন-বাংলাদেশ, উদ্বেগে ভারত
- The Diplomat – China-Bangladesh Military Exercises Signal Shifting Geopolitical Landscape
- The Statesman – China-Bangladesh defence trade: Story so far
- Mirror UK – China shows off massive collection of newest weapons in huge military parade in statement of fighting prowess
- Alamy – Beijing, China. 30th July, 2017. A military parade is held to celebrate the 90th anniversary of the founding of the Chinese People’s Liberation Army (PLA)…
- Rumor Scanner’s own analysis
|