schema:text
| - Last Updated on April 29, 2023 by Team THIP
সারমর্ম
বেশ কিছু ডায়েট-সম্পর্কিত নিবন্ধ চিয়া বীজকে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে একটি জাদুকরী উপাদান হিসেবে প্রচার করে থাকে। এরকমই কয়েকটি সোশাল মিডিয়া পোষ্টে পরামর্শ দেওয়া হয় যে চিয়া বীজ, লেবু ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে ৩০ দিনে চর্বি ঝড়ে যাবে। আমরা এর ফ্যাক্ট চেক করে দেখে জানাচ্ছি এই দাবি অর্ধসত্য।
দাবি
বহু প্রচলিত একটি ভ্রান্তিকর দাবি যে চিয়া বীজ খেয়েই শরীরের সব মেদ ঝরিয়ে ফেলা যায় । এই সংক্রান্ত পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদ মাধ্যম গুলোতে প্রায়ই দেখা যায় । তার মধ্যে একটি পোস্ট এখানে দেখা যাবে ।
সত্যানুন্ধান
চিয়া বীজ কি ওজন কমাতে পারে?
চিয়া বীজের ওজন কমানোর ক্ষমতা সম্পর্কে অল্পই প্রমাণ রয়েছে।
২০১৪ সালে মাত্র ২৬ জন কে নিয়ে এক সমীক্ষায়, গবেষকরা ডায়েটের মধ্যে চিয়া বীজ ব্যবহার করার ফলাফল পরীক্ষা করেছেন। যা পাওয়া গেছে তা হল প্রায় ১২ সপ্তাহ পর, যারা চিয়া বীজ খেয়েছেন উল্লেখযোগ্যভাবে তাদের ওজন কমেছে।
৭৭ জন যাদের টাইপ ২ ডায়বেটিস রয়েছে তাদের নিয়ে ৬ মাস ধরে চলা অন্য একটি গবেষণায়, চিয়া বীজে ওজন কমে যাওয়ার ফল পাওয়া গেছে।
এর বিপরীতে, ১২ সপ্তাহ ধরে ৯০ জন বেশী ওজনের মানুষদের নিয়ে এক গবেষণায়, দেখে গেছে ওজন কমানোয় চিয়া বীজ কোন কাজে আসেনি। এরকমই ৬২ জন মহিলাকে নিয়ে ১০ সপ্তাহ ধরে আর একটি গবেষণায় শরীরের ওজনে চিয়া বীজের কোন প্রভাব পড়েনি বলে দেখা গেছে।
এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এই সবগুলিই তুলনামূলকভাবে ছোট গবেষণা। যদিও ওজন কমানোর ক্ষেত্রে চিয়া বীজের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন, তবে এগুলি অবশ্যই যাদুকরী বীজ নয় যা দ্রুত চর্বি কমাতে পারে। চিয়া বীজ একটি অনুঘটক হিসাবে চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে তবে একটি নিয়ন্ত্রিত ডায়েট প্ল্যান বা খাদ্য পরিকল্পনা এবং একটি স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল বা জীবনধারা এ ধরণের ফলাফলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ – অধিকাংশ নিবন্ধে এবং সোশাল মিডিয়া পোষ্টে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গটি থাকে না।
ওজন কমাতে আপনি কি চিয়া বীজ মেশানো লেবুজল খাবেন?
এধরণের ডায়েট প্ল্যানে যাবার আগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা কিন্তু সতর্ক করে দিয়েছেন।
ক্লিনিকাল ডায়াটেশিয়ান মেলানি ডিসুজা বলেছেন, ”ডায়েট সম্পর্কে এই ধরনের সর্বজনীন পরামর্শ সবসময় বিপজ্জনক। একজন প্রতিষ্ঠিত পেশাদার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কখনই ওজন কমানোর জন্য শুধুমাত্র চিয়া বীজ মেশানো লেবু জল খাওয়ার পরামর্শ দেবেন না। একজন ব্যক্তির চিকিৎসা ও রোগের ইতিহাস বোঝার পরে ব্যালান্সড ডায়েট বা পরিকল্পিত সুষম খাদ্যের অংশ হিসাবে এটি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। একটি ব্যালান্সড ডায়েট বা সুষম খাদ্য দ্রুত সমাধানের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর ও কার্যকরী উপায়ে ওজন/চর্বি কমানোর চাবিকাঠি হিসেবে ধরা হয়।
পরিমিত মাত্রার ওপরে যে কোনো কিছুই শরীরের ক্ষতি করতে পারে।“
ডায়াটেশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট কাজল গুপ্তা বলেছেন,”চিয়া বীজ স্বাস্থ্যকর। লেবু জল স্বাস্থ্যকর। দুটোই আপনার ওজন কমানোর ডায়েটে থাকতে পারে। কিন্তু এটা ভাবা ঠিক নয় যে শুধুমাত্র এই দুটি জিনিসই এককভাবে আপনার ওজন কমিয়ে দিতে পারবে। পরিমিত খাবার খাওয়া ও ব্যায়াম করা সবস্ময় গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও ওজন কমানোর জন্য ‘উপোষ’,‘তাড়াতাড়ি’ এই শব্দগুলিকে কখনোই জড়ানো উচিৎ নয়। সবচেয়ে ভালো হবে যদি আপনি একজন প্রতিষ্ঠিত পেশাদার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেন এবং আপনার শরীরের চর্বি, চিকিৎসা ও রোগের ইতিহাস ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে একটি ডায়েট চার্ট তৈরি করেন।“
ডিসুজা আরও সাবধান করে দিয়েছেন যে,” যদি কেউ দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের সীমিত খাদ্য গোষ্ঠীর ডায়েট মেনে চলে, তবে তারা পুষ্টির ঘাটতির ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকির সম্মুখীন হবে (যেহেতু এই ধরনের খাদ্য অন্ত্রকে অসুস্থ করে তোলে, ভারসাম্যহীন পুষ্টির সমস্যা ইত্যাদি হয়)। এগুলোর ওপর গুরুত্ব না দেওয়া হলে এটি চিকিৎসা সংক্রান্ত জটিলতাও তৈরী করতে পারে।
এমনিতে চিয়া বীজ কি স্বাস্থ্যকর?
পুষ্টিগুণ অনুযায়ী, চিয়া বীজ-কে খুবই স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন এবং পটাশিয়াম ছাড়াও এর মধ্যে অনেকরকম অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে এবং এটি ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে হাইপারটেনশনের রোগীদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটা কাজ করে এবং হার্টের অসুখেও বিশেষ করে যাদের টাইপ ২ ডায়বেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে।
তবে চিয়া বীজ যেহেতু রক্ত পাতলা করার প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে, তাই আপনাকে যদি ইতিমধ্যেই রক্ত পাতলা করার ওষুধ দেওয়া হয় তবে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ডিসুজা পরামর্শ হিসেবে এর সঙ্গে বলেছেন, ”যেকোনো অন্ত্রের কোন রকম সমস্যা এড়াতে এবং ভালো হজমের জন্য চিয়া বীজ খাবার আগে সবসময় ভিজিয়ে রাখবেন।“
|