schema:text
| - সম্প্রতি ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল লুট, কাদেরের ভ্রমণ বিলাসে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ’ শীর্ষক দাবিতে একটি ব্যাংক চেকের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে প্রচারিত এমন কিছু পোস্ট দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ), পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল লুট করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভ্রমণ বিলাসের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রচারিত চেকটি ভুয়া। প্রকৃতপক্ষে চেকটিতে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ব্যাংক একাউন্টের নাম ও নাম্বারের মিল না থাকাসহ বেশ কিছু অসংগতি পাওয়া গেছে। এছাড়া চেকটি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের প্রণোদনার একটি চেক থেকে সম্পাদনা করা হয়েছে।
দাবিটি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই রিউমর স্ক্যানার টিম চেকটিতে প্রদত্ত তথ্যসমূহ যাচাই করে। এ যাচাইয়ের কাজে ওপেন সোর্স থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে দেওয়া একাধিক চেকের সাহায্য নেওয়া হয়।
অসংগতি ১: প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম এবং নাম্বার ভুল
ওবায়দুল কাদেরের ভ্রমণ বিলাসের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রচারিত চেক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম PM’s Relief Fund এবং অ্যাকাউন্ট নাম্বার দেওয়া 4435403007037।
অপরদিকে ওপেন সোর্সে পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম PRODHAN MONTRIR TRAN O KALYAN TAHABIL এবং অ্যাকাউন্ট নাম্বার হলো 0107333004093।
অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরের ভ্রমণ বিলাসের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রচারিত চেকটিতে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের অ্যাকাউন্ট নাম এবং নাম্বারটি ভুল।
অসংগতি ২: একই চেকে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্ট নাম্বার
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ওবায়দুল কাদেরের ভ্রমণ বিলাসের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রচারিত চেকটির দুই জায়গায় অ্যাকাউন্ট নাম্বারের ভিন্নতা রয়েছে।
চেকটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এর একস্থানে অ্যাকাউন্ট নাম্বার রয়েছে 4435403007037। আবার এরই নিচে যে অ্যাকাউন্ট নাম্বারটি রয়েছে সেটি হলো 4435403000037। অর্থাৎ শেষ চার সংখ্যার এক জায়গায় লেখা ৭০৩৭, অন্য জায়গায় লেখা ০০৩৭।
অসংগতি ৩: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সিল ও স্বাক্ষর
পাশাপাশি ওপেন সোর্সে পাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের চেকগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সিল ও স্বাক্ষর লক্ষ্য করা যায়, যা আলোচিত চেকটিতে অনুপস্থিত।
অসংগতি ৪: চেকে উল্লিখিত ব্যাংকের শাখায় বিভ্রান্তি
ভাইরাল চেকটিতে দেখা যায়, সেখানে সোনালি ব্যাংকের শাখা উল্লেখ করা হয়েছে তেজগাঁও শাখা, ঢাকা। তবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যান তহবিলের প্রকৃত চেকগুলোতে সোনালি ব্যাংকের শাখা উল্লেখ করা আছে প্রাইম মিনিস্টার অফিস কর্পোরেট, ঢাকা।
অসংগতি ৫: চেকে ভাষাগত অসংগতি
চেকটি নিয়ে বিশ্লেষণে দেখা যায়, চেকটিতে সহায়তা গ্রহণকারীর নাম অর্থাৎ ওবায়দুল কাদেরের নাম ও অর্থের পরিমাণ ইংরেজিতে উল্লেখ রয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের প্রাপ্ত চেকগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেখানে এই তথ্যগুলো বাংলায় উল্লেখ থাকে।
এছাড়া চেকটিতে প্রদত্ত তারিখ অনুযায়ী এই ঘটনা গত ২২ আগস্টের। তবে এ নিয়ে অনুসন্ধানে কোনো নির্ভরযোগ্য গণমাধ্যম সূত্রে এমন কোনো তথ্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
চেকটি আসলে কার?
রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে চলতি বছরের গত ২৪ মে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে ‘ঢাকা আইনজীবী সমিতিকে ছয় কোটি সত্তর লক্ষ পনের হাজার আটশত পঁচাত্তর টাকার আইনজীবী প্রণোদনার চেক প্রদানের মাধ্যমে বার কাউন্সিল হতে প্রণোদনা অর্থ বিতরণ শুরু হল‘ শীর্ষক শিরোনামে একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়।
এই বিজ্ঞপ্তিতে ব্যবহৃত চেকের ছবিটির সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরের ভ্রমণ বিলাসের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রচারিত চেকটির অ্যাকাউন্ট নাম্বার ও স্বাক্ষরের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, একই চেক সম্পাদনা করে ইতোপূর্বেও ওবায়দুল কাদেরের নামে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ার দাবিতেও প্রচার করা হয়েছিল। এছাড়া এই চেকটিই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোন শেখ রেহানার নামেও প্রচার হয়েছিল।
এ নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনগুলো দেখুন
- প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে মির্জা ফখরুলের সহায়তা নেওয়ার দাবিতে ভাইরাল চেকটি ভুয়া
- প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ওবায়দুল কাদেরের সহায়তা নেওয়ার দাবিতে ভুয়া চেক ভাইরাল
- শেখ হাসিনা, তাঁর মেয়ে ও বোনের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল লুটের দাবিতে ভুয়া চেক ভাইরাল
মূলত, গত আগস্টে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছেন এমন দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চেকের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। যা অনুসন্ধানে ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে একই চেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও বোন শেখ রেহানার অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার দাবিতে প্রচার করা হয়। সম্প্রতি একই চেক ঈষৎ সম্পাদনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামে প্রচার করা হচ্ছে। যা ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তাঁর চিকিৎসা সহায়তা নেওয়ার দাবিতেও প্রচার হয়েছিল।
সুতরাং, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ওবায়দুল কাদেরের ভ্রমণ বিলাসের জন্য ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ সংক্রান্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত চেকটি ভুয়া এবং উল্লিখিত দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Rumor Scanner Own Analysis
- Bangladesh Bar Council: ‘ঢাকা আইনজীবী সমিতিকে ছয় কোটি সত্তর লক্ষ পনের হাজার আটশত পঁচাত্তর টাকার আইনজীবী প্রণোদনার চেক প্রদানের মাধ্যমে বার কাউন্সিল হতে প্রণোদনা অর্থ বিতরণ শুরু হল
|