schema:text
| - সম্প্রতি,‘পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে পুলিশ মুখ খুললো হাসপাতালের আহত পুলিশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখুন পোস্ট (আর্কাইভ) ও পোস্ট (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে কনস্টেবল আমিরুল পারভেজ নিহত হননি এবং উক্ত ঘটনায় আহত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনো পুলিশ সদস্যও এমন কোনো তথ্য প্রদান করেননি। প্রকৃতপক্ষে, ইউটিউবার ও সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘হাসিনার ফাদ হইতে সাবধান!’ শীর্ষক শিরোনামে সম্প্রতি প্রচারিত একটি ভিডিওর কিছু অংশ কাট করে তার শুরুতে এবং শেষাংশে উপস্থাপকের ভয়েস যুক্ত করে অধিক ভিউ পাওয়ার আশায় চটকদার শিরোনাম এবং থাম্বনেইল ব্যবহার করে ভিত্তিহীনভাবে উক্ত দাবিটি প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম। এতে দেখা যায়, ভিডিওটিতে সঞ্চালক দাবি করেন, গত ২৮ অক্টোবর পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে পুলিশ কর্মকর্তা নিহত এবং হামলার ব্যাপারে আহত পুলিশ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করেছেন। গোপন তথ্যসূত্রের মাধ্যমে সাংবাদিক ইলিয়াস উক্ত তথ্যগুলো সংগ্রহ করে তার ভিডিওর মাধ্যমে তিনি তা জনসম্মুখে এনেছেন। এরপর উপস্থাপক দর্শকদের উদ্দেশ্যে সেই ভিডিওটি দেখান।
আলোচিত সেই ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাংবাদিক ইলিয়াস কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই দাবি করেন যে পুলিশ বাহিনীতে যেসকল সদস্যরা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ তাদেরকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাঠিয়ে থাকেন। কনস্টেবল আমিরুল পারভেজ রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হওয়ায় তাকে সেদিন সেখানে ডিউটিতে পাঠানো হয়। এছাড়াও তিনি দাবি করেন যে, তার ধারণা কনস্টেবল আমিরুল পারভেজকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছেন। কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র ছাড়াই ভিডিওটিতে তিনি তার বক্তব্যের সপক্ষে নানা বিশ্লেষণ উপস্থান করেন। তবে, ভিডিওটির কোথাও পুলিশ সদস্যের করা গুলিতে কনস্টেবল আমিরুল পারভেজ নিহত হওয়ার ব্যাপারের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তী অনুসন্ধানে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সাংবাদিক Elias Hossain এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ৯ নভেম্বর হাসিনার ফাঁদ হইতে সাবধান! #eliashossain #sheikhhasina #awamileague #bnp #police শীর্ষক শিরোনামে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে ইলিয়াস হোসেনের দেখানো ভিডিওটির ফুল ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওটি পর্যালোচনা করেও ২৮ অক্টোবর পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে কনস্টেবল নিহত হওয়ার ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে থাম্বনেইলে ব্যবহৃত আহত পুলিশ সদস্যদের ছবিগুলো উক্ত ঘটনার কিনা তা যাচাই করতে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে বাংলানিউজ২৪ এর ওয়েবসাইটে ২০২২ সালের ১৩ জুন বিএনপির হামলায় ৫ পুলিশ সদস্য আহত, আটক ১৩ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এটির ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত থাম্বনেইলে ব্যবহৃত আহত পুলিশ সদস্যদের ছবির হুবহু মিল রয়েছে।
পাশাপাশি জানা যায়, উক্ত ছবিটি সেসময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বরগুনার আমতলী উপজেলা বিএনপির ডাকা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির সময়ের। কর্মসূচিতে বাধা দিলে পুলিশের ওপর তখন দলটির নেতাকর্মীরা হামলা চালান। এসময় ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। যাদের দুজনকে উক্ত ছবিতে দেখা যাচ্ছে।
এছাড়াও প্রাসঙ্গিক নানা কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় আহত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনো পুলিশ সদস্যের সেদিন পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে কনস্টেবল নিহত হওয়ার তথ্য প্রদানের কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে The Business Standard এর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে গত ২৮ অক্টোবর পুলিশের ওপর বর্বরোচিত সেই হামলা শীর্ষক থাম্বনেইল এবং রাজধানীর ফকিরাপুল চার রাস্তার মোড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘ’র্ষে এক পুলিশ কনস্টবল নিহত হয়েছেন শীর্ষক ক্যাপশনে ২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু ভিডিওটিতে হামলার শিকার পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে কাউকে গুলি করতে দেখা যায়নি। বরং ভিডিওতে একদল উত্তেজিত জনতা কর্তৃক কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বেধরপ প্রহার করতে দেখা যায়।
এছাড়া, চ্যানেল২৪ এর ইউটিউব চ্যানেলে ‘যেভাবে হামলা চালানো হলো পুলিশের উপর’ শীর্ষক শিরোনামে একই স্থানের ৩:০৫ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওটিতেও শিকার পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে কাউকে গুলি করতে দেখা যায়নি।
পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ৭ নভেম্বর ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় পুলিশ হত্যার নেতৃত্ব দেয় আমান’ | Police Investigation | BNP শীর্ষক শিরোনামে প্রচারিত একটি মাল্টিমিডিয়া প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামানকে বলতে শোনা যায়, ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান-এর নেতৃত্বে সেদিন পুলিশ কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এসময় একটি বড় ইটের আঘাতে কনস্টেবল আমিরুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তাকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। উক্ত ঘটনায় রাজধানীর মহাখালী থেকে আমানউল্লাহ আমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অর্থাৎ, উপরোক্ত তথ্য প্রমাণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, ২৮ অক্টোবর পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের সময় পুলিশে গুলিতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল পারভেজ নিহত হননি।
মূলত, গত ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সমাবেশের এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। উক্ত সংঘর্ষ চলাকালে একদল উত্তেজিত জনতার হামলায় রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় আমিরুল পারভেজ নামের একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। এছাড়াও একই ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য ব্যাপক আহত হন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ‘পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে পুলিশ মুখ খুললো হাসপাতালের আহত পুলিশ’ শীর্ষক থাম্বনেইল ব্যবহার করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। যেটিতে কোনো প্রকার নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্র ছাড়াই সাংবাদিক ইলিয়াসকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্বারা রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ডিউটিতে প্রেরণের এবং পুলিশ কনস্টেবল হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের জড়িত থাকার দাবি করতে শোনা যায়। এছাড়াও ভিডিওটির কোথাও পুলিশের গুলিতে কনস্টেবল নিহত হবার বিষয়ে কোনো প্রদান করতে দেখা যায়নি।
সুতরাং, ২৮ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে পুলিশ নিহত হওয়ার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Elias Hossain Youtube Channel: হাসিনার ফাঁদ হইতে সাবধান! #eliashossain #sheikhhasina #awamileague #bnp #police
- M K Mahdi Facebook Post: ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশে এক নিরীহ পুলিশ সদস্যকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল সম্পূর্ণ ভিডিও দেখুন,,,
- Channel 24 Youtube Channel: (67) যেভাবে হামলা চালানো হলো পুলিশের উপর | Kakrail Clash | Channel 24 – YouTube
- Prothom Alo Youtube Channel: ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় পুলিশ হত্যার নেতৃত্ব দেয় আমান’ | Police Investigation | BNP
- Rumor Scanner’s Own Analysis
|