schema:text
| - সম্প্রতি, শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে হিন্দুরা। অপেক্ষা শুধু হিন্দুত্ববাদীদের। শীর্ষক শিরোনামে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোতে ১৭ জন ব্যক্তির নাম, পদবী এবং প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নামগুলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
নামের এই তালিকায় রয়েছেন,
১. প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) শ্যামল কান্তি ঘোষ।
২. পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব বজ্র গোপাল ভৌমিক।
৩. কারিগরি শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব অশোক কুমার বিশ্বাস।
৪. সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) যুগ্ম পরিচালক রতন কুমার রায়।
৫.সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) বিশেষজ্ঞ ড. উত্তম কুমার দাশ।
৬. ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক অদ্বৈত কুমার রায়।
৭. চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব ড. পীযুষ কান্তি দন্ত।
৮. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র ঢালী।
৯. বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়্যারম্যান নারায়ন চন্দ্র পাল।
১০. ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র।
১১. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব অজিত কুমার ঘোষ।
১২. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব পতিত পাবন দেবনাথ।
১৩. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব অসীম কুমার কর্মকার।
১৪. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান স্বপন কুমার ঘোষ।
১৫. শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্রী বনমালী ভৌমিক।
১৬. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ্বাস।
১৭. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার।
উক্ত দাবিতে সম্প্রতি ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবি ২০২২ সালে ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে রিউমর স্ক্যানার টিম সেসময় ফ্যাক্টচেক করে জানিয়েছিল, বাংলাদেশের সেসময়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বে নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে উক্ত দাবির তথ্যগুলোর মিল নেই।
তবে সম্প্রতি ফের একই দাবি প্রচারের প্রেক্ষিতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে উক্ত পদগুলোতে দাবিতে উল্লিখিত ব্যক্তিরা রয়েছেন কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয় রিউমর স্ক্যানার৷
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন পদে হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিদের প্রাধান্য দাবিতে ১৭ জন ব্যক্তি এবং তাদের পদের যে তালিকা ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বরং সংশ্লিষ্ট কোনো পদেই উক্ত ব্যক্তিরা বর্তমানে কর্মরত নেই।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের মহাপরিচালক কি শ্যামল কান্তি ঘোষ?
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) শাহ নেওয়াজ হায়াত। তিনি ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে শ্যামল কান্তি ঘোষ ২০০৯ সালের ১৪ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন।
বজ্র গোপাল ভৌমিক কি এনসিটিবির সচিব?
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এর বর্তমান সচিবের নাম মোসাঃ নাজমা আখতার।
আমরা এনসিটিবির ওয়েবসাইটে বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তাদের তালিকা যাচাই করেও উক্ত নামে কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাইনি।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কি জনাব অশোক কুমার বিশ্বাস?
অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হিসেবে বর্তমানে দায়িত্বে আছেন মোঃ আজিজ তাহের খান।
তবে অশোক কুমার বিশ্বাস ২০১৫ সালের ২৯ জুন থেকে ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত একই পদে দায়িত্বে ছিলেন।।
সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) যুগ্ম পরিচালক কি রতন কুমার রায়?
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) এর বর্তমান যুগ্ম পরিচালক প্রফেসর ড. সামসুন নাহার।
তবে একই প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক হিসেবে অতিরিক্ত সচিব রতন কুমার রায় ২০১৬ সালে দায়িত্বে থাকার প্রমাণ মিলেছে।
সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) বিশেষজ্ঞ কি ড. উত্তম কুমার দাশ?
অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, সৃজনশীল পদ্ধতি বাস্তবায়নকারী মাধ্যমিক শিক্ষা খাত উন্নয়ন কর্মসূচির (সেসিপ) এ ‘বিশেষজ্ঞ’ বলে কোন পদ নেই।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি-৪) পদে একই নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন।
ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক কি অদ্বৈত কুমার রায়?
রিউমর স্ক্যানার টিম যাচাই করে দেখেছে, ঢাকা বোর্ডের বর্তমান উপ-কলেজ পরিদর্শক মুহাম্মদ রবিউল আলম।
তবে অদ্বৈত কুমার রায় ২০১৮ সালে ঢাকা বোর্ডের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে কর্মরত ছিলেন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব কি ড. পীযুষ কান্তি দন্ত?
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান সচিব প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র নাথ।
ড. পীযুষ কান্তি দন্ত নামে বর্তমানে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে কোনো কর্মকর্তা থাকার প্রমাণ মেলেনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কি সুবোধ চন্দ্র ঢালী?
অনুসন্ধান বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উপ প্রধান তথ্য কর্মকর্তা নামে কোনো পদ নেই। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা নামে একটি পদ রয়েছে। এই পদে বর্তমানে রয়েছেন মোহাম্মদ আবুল খায়ের।
তবে সুবোধ চন্দ্র ঢালী ২০২২ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের উপ-সচিব (কারিগরি-২) হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে তিনি এই পদে নেই।
বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়্যারম্যান কি নারায়ন চন্দ্র পাল?
আমরা অনুসন্ধানে দেখেছি, এনসিটিবির চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব থেকে নারায়ণ চন্দ্র সাহা ২০২১ সালে অবসরে যান। বর্তমানে এই পদে রয়েছেন প্রফেসর মোঃ ফরহাদুল ইসলাম।
ঢাকা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কি শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র?
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার বর্তমান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নাম প্রফেসর মোঃ আবুল বাসার।
তবে উক্ত পদে ২০১৬ সালে শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্রের দায়িত্ব পালনের প্রমাণ মিলেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কি অজিত কুমার ঘোষ?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৬ সালের একটি নথি থেকে জানা যাচ্ছে, সেসময় মন্ত্রণালয়ের অডিট ও আইন অধিশাখার উপসচিবের দায়িত্বে ছিলেন অজিত কুমার ঘোষ। তবে এই দায়িত্বে এখন তিনি নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুইটি বিভাগের কর্মকর্তাদের তালিকায়ও (১, ২) অজিত কুমার ঘোষের নাম পাওয়া যায়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব কি পতিত পাবন দেবনাথ?
জনাব পতিত পাবন দেবনাথ ২০১৫ সালের মার্চে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (ক্যাডার বহির্ভূত) পদে যোগ দেন। ২০২২ সালের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি নথি থেকে জানা যায়, সে বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় পত্রগ্রহণ ও অভিযোগ শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাছাড়া, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুইটি বিভাগের কর্মকর্তাদের তালিকায়ও (১, ২) বর্তমানে তার নাম নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব কি অসীম কুমার কর্মকার?
অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (বিধিবদ্ধ নিরীক্ষা) পদে বর্তমানে জনাব অসীম কুমার কর্মকারের নাম রয়েছে।
জনাব অসীম ২০১৬ সালে মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান কি স্বপন কুমার ঘোষ?
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগের যুগ্ম-প্রধান ছিলেন স্বপন কুমার ঘোষ। এই বিভাগে বর্তমানে তিনি কর্মরত নেই। এমনকি এই বিভাগে কোনো হিন্দু কর্মকর্তাই নেই।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব কি শ্রী বনমালী ভৌমিক?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুইটি বিভাগের কর্মকর্তাদের তালিকায় (১, ২) বর্তমানে বনমালী ভৌমিক নামে কারো নাম উল্লেখ নেই। তবে পূর্বে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কি ড. অরুণা বিশ্বাস?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুইটি বিভাগের কর্মকর্তাদের তালিকায় (১, ২) বর্তমানে ড. অরুণা বিশ্বাস নামে কারো নাম উল্লেখ নেই। তবে অনুসন্ধানে জানা যাচ্ছে, ২০২০ সালের পূর্বে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন ও অর্থ) দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে তাকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষে (এনটিআরসিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কি স্বপন কুমার সরকার?
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুইটি বিভাগের কর্মকর্তাদের তালিকায় (১, ২) বর্তমানে স্বপন কুমার সরকার নামে কারো নাম উল্লেখ নেই।
মূলত, শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন পদে হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিদের প্রাধান্য দাবিতে ১৭ জন ব্যক্তি এবং তাদের পদের তালিকা অন্তত ২০১৫ সাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট কোনো পদেই উক্ত ব্যক্তিরা বর্তমানে কর্মরত নেই।
সুতরাং, শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে হিন্দুরা শীর্ষক দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমো প্রচারিত তথ্যের তালিকাটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- DPE Website: Department of Primary Education
- NCTB Website: National Curriculum and Text Book
- Technical Education Board Website: Technical Education Board
- Technical and Madrasah Education Board: Technical and Madrasah Education Board
- SESIP Website: SECONDARY EDUCATION SECTOR INVESTMENT PROGRAM (SESIP)
- Dhaka Education Board Website: Dhaka Education Board
- Chattogram Education Board: Chattogram Education Board
- secondary and Higher Education Division: Secondary and Higher Education Division
- Secondary and Higher Education Division Officer list: Secondary and Higher Education Division Officer list
- Rumor Scanner’s own analysis
|