schema:text
| - গত ১০ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইসলামি ভাবধারার সংগীত পরিবেশনের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তা দ্রুত ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। অনেকেই ভিডিওটি নিয়ে সমালোচনা করলেও, কিছু মানুষ এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, মূল ভিডিওতে ভিন্ন ধরনের গান পরিবেশিত হয়েছিল, যা পরে এডিট বা সম্পাদনা করে ইসলামি সংগীত যুক্ত করা হয়েছে।
এডিটেড দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে ইসলামি ভাবধারার সংগীত পরিবেশনের ভিডিওটি এডিটেড নয় বরং আসল। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ব্যানারে ওই রাতে ছয়জন যুবক পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠানে দুটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে একটি ছিল আলোচিত ‘শুধু মুসলমানের লাগি’ নামের গান এবং অন্যটি একটি বাউল গান।
চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ভিডিও অনুসন্ধানে স্থানীয় গণমাধ্যম ‘সিভয়েস২৪’-এর ফেসবুক পেজে ১০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৮টা ৫৫ মিনিটে প্রকাশিত “চট্টগ্রামে দুর্গোৎসব: জেএমসেন হল প্রাঙ্গণ” শিরোনামের একটি ফেসবুক রিল ভিডিওতে একই ঘটনার ভিন্ন কোণ থেকে ধারণ করা ভিডিও পাওয়া যায়। ওই ভিডিওতে একই ইসলামি সংগীত পরিবেশিত হতে দেখা যায়।
গানের লিরিক বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গানটির শিরোনাম ‘শুধু মুসলমানের লাগি’, যার গীতিকার ও সুরকার চৌধুরী আবদুল হালিম।
সিভয়েস২৪-এর ফেসবুক পেজে অনুসন্ধানে ১০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রামের জেএমসেন হলে অনুষ্ঠিত দুর্গোৎসবের ৩৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ফেসবুক লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়।
এই ভিডিওতে দেখা যায়, একই গায়ক দল ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটি পরিবেশন করছেন। ভিডিওর ১ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে দেখা যায়, গান পরিবেশনের পর শিল্পীরা মঞ্চ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ সময় দলের একজন মাইক্রোফোন হাতে পূজা উদযাপন কমিটি ও উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির পক্ষ থেকে’ অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানান। তার বক্তব্যের পরপরই আরেকজন মাইক্রোফোনে বলেন, “ধন্যবাদ চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীবৃন্দদের। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা যে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন, তার জন্য বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও সাধুবাদ জানাই।”
মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের বিতর্ক নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আমরা সিভয়েস২৪-এর সাথে যোগাযোগ করেছি। প্রতিষ্ঠানটি এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ সত্য বলে নিশ্চিত করেছে। সিভয়েস২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রশীদ মামুন জানান, “ওরা অনুষ্ঠান মঞ্চে দুটি গান পরিবেশন করে। এর মধ্যে প্রথম গানটি সিভয়েস২৪-এর লাইভ স্ট্রিমিংয়ে সম্প্রচার করা সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের প্রতিবেদক সেটি রেকর্ড করতে সক্ষম হন। পরে আমরা সেই গানটিও আমাদের ফেসবুক পেজে আপলোড করি। গানগুলো ‘ইসলামি গান’ কি না বা ‘কোন শ্রেণির গান’— তা বোঝার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উত্তমভাবে মন্তব্য করতে পারবেন। আমাদের দায়িত্ব ছিল যা ঘটেছে, তা পাঠক ও দর্শকদের সামনে তুলে ধরা। সিভয়েস২৪ ঘটনাটি দেখেছে, শুনেছে এবং শতভাগ সত্যতা নিশ্চিত করে বলছে যে, এই দুটি গান পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে পরিবেশিত হয়েছে।”
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পূজামণ্ডপে ‘স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের’ আগমনকে কেন্দ্র করে পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময়ই ছয় যুবকের গান পরিবেশনের ঘটনাটি ঘটে। পূজামণ্ডপে যে ইসলামি গান পরিবেশন করা হবে, তা কমিটির সদস্যরা আগে থেকে জানতেন না। মঞ্চে ওঠার আগে ঐ ছয় যুবককে ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’-র সদস্য হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ওইদিন তাদের গান পরিবেশনের কোনো পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা ছিল না। পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে ঐ যুবকেরা মঞ্চে গান পরিবেশন করেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত এবং চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ ইতোমধ্যে শহিদুল করিম ও নুরুল ইসলাম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়েছে, সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীদের গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন। ওইদিন রাত ৮টায় তারা একটি ইসলামি গান ও একটি বাউল গান পরিবেশন করেন।
এ ঘটনার জেরে পূজা পরিষদের সভাপতি ও সম্পাদককে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি এক বিবৃতিতে পূজামণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশন নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের পরিবেশিত দুটি সম্প্রীতির গানকে কেন্দ্র করে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, যা সংগঠনটির জন্য উদ্বেগের কারণ। সংগঠনটি এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং যারা কষ্ট পেয়েছেন, তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। এছাড়া, আটক শিল্পীদের মুক্তির দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
অর্থাৎ, চট্টগ্রাম নগরে একটি পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ভিডিওটি এডিটেড বা সম্পাদিত দাবিতে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
- Cvoice24.com – Facebook Post
- Panjeri – শুধু মুসলমানের লাগি
- Cvoice24.com – Facebook Post
- BBC Bangla – চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপে ‘ইসলামি গান’ পরিবেশন নিয়ে যা জানা যাচ্ছে
- Ajker Patrika – মণ্ডপে ‘ইসলামি গান’: পূজা উদ্যাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদকসহ ৭ জনের নামে মামলা
- Chattogram Metropolitan Police – Facebook Post
- BDNEWS24 – পূজা মণ্ডপে ‘ইসলামি সংগীত’: চট্টগ্রাম পূজা পরিষদের সভাপতি ও সম্পাদককে অব্যাহতি
- চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি – Facebook Post
- Statement from Rashid Mamun, Executive Editor, Cvoice24.
- Rumor Scanner’s analysis.
|